২২৬ বৃদ্ধ ও এতিমের পিতা শমেস ডাক্তার শীতে বেকায়দায় রয়েছে

আমানুল হক আমান:
রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এই গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি এতিমখানা। নাম দেয়া হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন।

বর্তমানে এতিমের সংখ্যা ১৬৬ জন। আর বৃদ্ধ রয়েছে ৬০ জন। এতিমদের মধ্যে ছেলে ১১৫ জন ও মেয়ে ৫১ জন। এসব এতিম সন্তানরা কেউই তার নিজের নয়। ১৯৮৪ সাল থেকে তার ৩৫ বছরে পৈতৃক ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করে এতিম ও বৃদ্ধদের রক্ষা করে চলেছে। সবাই শমেস ডাক্তারকে বাবা বলে ডাকে। তবে এ শীতের মধ্যে বৃদ্ধ ও এতিমদের নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে তিনি।

জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার প্রথমে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন এতিমখানা। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোঁড়া ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।

ওরা এতিম, এদের মধ্যে কারো বাবা নেই, কারো বা নেই মা, আবার অকালে অনেকেই হারিয়েছে বাবা-মা দুইজনকেই। একেক জনের জীবনের গল্প একেক রকম। এদের পরিবারের কোন খোঁজ নেই, এদের মধ্যে কেউ পরিত্যাক্ত আবার কেউ দূর্ভাগ্যক্রমে পরিবার বিছিন্ন মানুষ। এদের পরিবারও নেই, আনন্দও নেই। এতিমখানায় তাদের আসল ঠিকানা। তাই সবাই তাকেই বাবা বলেই ডাকে।

এতিমদের রক্ষার্থে আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। তিনি পল্লী চিকিৎসক পরিবার নিয়ে পড়েন বিপাকে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উঠে আসেন এতিমখানায়। স্ত্রী মেহেরুন্নেসা শিশুদের দেখা শুনা ও তাদের জন্য রান্না করেন তিন সন্ধ্যা। এখন মেহেরুন্নেসা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র।

বর্তমানে ১৬৯ জন এতিম ও ৩২ জন বৃদ্ধসহ তারা স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সবাই এক সাথে দিন রাত কাটান।

স্থানীয় মারুফ মন্ডল জানান, ২০১ জনের বিশাল পরিবার নিয়ে এতিমখানার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বেকায়দায় রয়েছে। তবে তিনি বলেন, একুশে পদক পাওয়ার মতো ব্যাক্তি মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার। সরকারের পক্ষ থেকে এতিম ও বৃদ্ধদের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাকে একুশে পদক দিয়ে দেশবাশির কাছে সম্মান দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এতিমখানার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বলেন, নিজের স্ত্রীর, ছেলে-মেয়ের, সরকাররি, বেসরকারি ও ব্যাক্তিগতভাবে যে, সহযোগিতা পায়, তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাঁকি রাখতে হয়। বছর শেষে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা ঋনের মধ্যে থাকতে হয়। সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেত। এছাড়া এবার যেহারে শীত শুরু হয়েছে। এতোগুলো এতিম ও বৃদ্ধদের নিয়েও বেকায়দায় রয়েছি। বর্তমানে ৫২ শতাংশ জমির উপর এতিম খানাটি উপজেলা সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সরেরহাট গ্রামে অবস্থিত।

স/অ