১৭ মার্চ ১৯২০: মহামানবের জন্ম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

১৯২০ এর ১৭ মার্চ চৈত্রের দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ভারতের শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিসেবে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু তখন সত্যাগ্রহ দর্শনের সমবয়স্ক!

যিনি বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদ উন্মেষের প্রতিটি আন্দোলনের বাঁক নির্মাণ করে একটি জাতিকে স্বাধীনতার অনন্য রৌদ্রে দাঁড় করিয়েছিলেন তিনিই বঙ্গবন্ধু। যার দর্শন হয়ে উঠেছে বাংলার আধুনিক চৈতন্যের পাণ্ডুলিপি। পৃথিবীর ক্ষণজন্মা মহাপুরুষদের খুঁজতে গিয়ে আমরা বারবার যে ব্যক্তির মুখোমুখি হই, যার নির্দেশে বন্ধ জানালা ভেঙে দেখা দিলো এক নতুন সূর্য, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি জাতির ইতিহাসের নাম।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ১৭ই মার্চ ২০১৮। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাশ করে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। শেখ মুজিব সেখান থেকেই ১৯৪৪ সালে আই.এ. এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ. পাশ করেন। এরপর ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন, ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে জরিমানা করায় তিনি এ আদেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন।

এরপর ছাত্রজীবন সমাপ্ত করেই শুরু হয় শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়া পর্যন্ত তিনিই ছিলেন পথ প্রদর্শক। তাই তিনি আজ স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ছাত্রজীবনেই পরিবারের চাপে ১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন শেখ জহুরুল হক ও হোসনে আরা বেগমের কন্যা ফজিলাতুন্নেসাকে।

শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন বর্তমান বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যজন লন্ডনে বসবাসরত শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। যাদের তিনজনকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কতিপয় পথভ্রষ্ট সেনা অফিসার কর্তৃক বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় জাতির হাতে স্বাধীনতার লাল সূর্য এনে দেয়া হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

কিন্তু সেদিন তারা বঙ্গবন্ধুর দেহটাকেই শুধু নিথর করতে পেরেছিল। পারেনি তার আদর্শকে হত্যা করতে। পারেনি তার আদর্শের সৈনিকদের মনোবলে চিড় ধরাতে। তারাই আজ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। তাই বঙ্গবন্ধু আজ শুধু বাংলাদেশের মানুষের মাঝেই নয় তিনি বেঁচে আছেন সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয় জুড়ে। ১৭ই মার্চ ক্ষণজন্মা এই মহান নেতার জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।