১৩১ রানে অলআউট বাংলাদেশ

কথায় আছে, ‘সকালের সুর্য সবসময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয় না’। তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকলো বাংলাদেশের ইনিংস। ডানেডিনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে দুরন্ত ছক্কা হাঁকিয়ে দলের ও নিজের রানের খাতা খুলেছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু এরপর ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে মেঘে ঢেকে গেলো গণগণে সুর্যটা। টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৪১.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে গেলো বাংলাদেশের ইনিংস।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল রানের খাতা খুলেছিলেন ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে। এরপর খেলছিলেন ধীরে সুস্থেই। তবে খুব বেশি সময় উইকেটে টিকতে পারলেন না টাইগার অধিনায়ক। বোল্টের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই এলবি হয়ে ১৫ বলে ১৩ রান করে ফিরলেন তামিম। আর টাইগাররা দলীয় ১৯ রানে হারাল প্রথম উইকেট।

তামিমের ফেরার পর টপ অর্ডারে ব্যাট করেতে এসে সৌম্য সরকার উইকেটে টিকলেন মাত্র তিন বল। বোল্টের করা বলে তুলে দিলেন ক্যাচ। ডেভন কনওয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচে শূন্য রানে ফেরালেন সৌম্যকে। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ধীর গতিতে রান তুলতে থাকলেও আশা দেখাচ্ছিলেন লিটন দাস। ধীরে ধীরে উইকেটে থিতুও হয়েছিলেন তিনি। তবে ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৪২ রানের মাথায় জেমস নিশামের বলে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে একটি চারে ১৯ রান করেন লিটন।

অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এবার দলের হাল ধরলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে সম্মানজনক সংগ্রহের পথেই রেখেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে না, নামের প্রতি এদিন সুবিচার করতে পারেননি মুশি। দলীয় ৬৯ রানের মাথায় ৪৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে স্লিপে থাকা মার্টিন গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। টাইগার এই ব্যাটসমানের উইকেটটি তুলে নেন জেমস নিশাম। এরপর দলের স্কোরবোর্ডে মাত্র তিন রান যোগ হতেই দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হয়ে ফিরতে হয় মোহাম্মদ মিঠুনকে। ২৭ বলে ৯ রান করে মিঠুন ফিরলে পঞ্চম উইকেটের পতন হয় টাইগারদের।

মোহাম্মদ মিঠুনের পর উইকেটে আসা মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটে টিকতে পারলেন না খুব বেশি সময়। মিচেল স্যান্টনারের বলে লেগ স্ট্যাম্পটা একটু বেশিই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ওই লেগ স্ট্যাম্পে বল লেগেই বোল্ড হয়ে ফিরতে হলো তাকে। ফেরার আগে ১০ বলে মাত্র একটি রানই যোগ করতে পেরেছিলেন মিরাজ।

ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আরেক মেহেদি হাসান, আর মাঠে এসেই দ্বিতীয় বলে মিচেল স্যান্টনারকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকান। ঝড়ো শুরু করার পর কিছুটা গুছিয়েও নিয়েছিলেন মেহেদি হাসান। তবে বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি। মিচেল স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হেনরি নিকোলসের হাতে বল তুলে দিয়ে ২০ বলে ১৪ রানে ফেরেন তিনি। আর তাতেই মাত্র ৯৮ রানে ৭ম উইকেটের পতন ঘটে টাইগারদের।

এরপর পেসার তাসকিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জুটি গড়েন রিয়াদ। রানের সংখ্যা মাত্র ২৭ হলেও বলের হিসেব করলে তা ৫১ তে দাঁড়ায়। আশা দেখাচ্ছিলেন রিয়াদ সম্মানজনক স্কোরটা অন্ততপক্ষে গড়তে পারবে টাইগাররা। তবে ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলে ম্যাট হেনরিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল স্যান্টনারের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন রিয়াদ। আর তাতেই বিপদের মুহূর্তে ৫৪ বলে ২৭ রানের ইনিংসের খেলে ফিরতে হয় তাকে।

এরপর আর খুব বেশি খুব বেশি সময় দেয়নি কিউই বোলাররা। ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলে হাসান মাহমুদকে বোল্ড করেন আর ৫ম বলে তাককিন আহমেদ স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এর আগে ৩২ বলে ১০ রানের ইনিংস খেলেন তাসকিন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিটাই টাইগারদের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি।

অন্যদিকে কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট ঝুলিতে পুরেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৮.৫ ওভার বল করে মাত্র ২৭ রানের বিনিময়ে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, হাসান মাহমুদ এবং তাসকিনের উইকেট নেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:

বাংলাদেশ: ১৩১/১০, ৪১.৫ ওভার, (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, মেহেদি হাসান ১৪, তাসকিন ১০, মাহমুদ ১ এবং মোস্তাফিজুর ১*); (বোল্ট ৮.৫-০-২৭-৪, হেনরি ৯-১-২৬-১, নিশাম ৮-১-২৭-২, স্যান্টনার ৮-০-২৩-২, কাইল জেমিসন ৮-১-২৫-০)

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ