১০ বছর ধরে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া সেই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত

অর্থের মোহ ত্যাগ করে মানবসেবায় প্রতিনিয়ত ছুটেছেন চিকিৎসক এবাদুল্লাহ সরদার। প্রেসক্রিপশন ফি প্রথমে পাঁচ টাকা এরপর কাগজপত্র ও সহকারীদের টাকা বাড়তি দিতে হওয়ায় ফি নির্ধারণ করেন ১০ টাকা।

এটিই তার চিকিৎসার জীবনের সর্বোচ্চ প্রেসক্রিপশন ফি। গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন দেশজুড়ে। ফ্রিতে সবার চিকিৎসা দেয়া সেই চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার মোতালেব সরদারের ছেলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবাদুল্লাহ সরদার। শহরের পাকাপোলের মোড় এলাকায় খান মার্কেটে দোতলায় ৪০ বছর আগে গড়ে তোলেন নওয়াজ ক্লিনিক। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এই চিকিৎসক। ২০০৯-১০ সালে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসরে যান ২০১০ সালে। এরপর থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। তিন ছেলে নাদিম ওয়াহিদ, নেওয়াজ ওয়াহিদ ও নাবিদ ওয়াহিদ। তিন ছেলেই এখন স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করেন।

করোনাভাইরাসের মহামারির মুহূর্তেও সন্তানদের নিষেধ উপক্ষো করে ছুটেছেন চেম্বারে রোগী দেখতে। রোগীদের সেবা দিতে কখন নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা নিজেই জানেন না। বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গরিবের ডাক্তারখ্যাত এবাদুল্লাহ।

চিকিৎসক এবাদুল্লাহ সরদারের মেজো ছেলে নেওয়াজ ওয়াহিদ জিমি বলেন, আব্বুকে অনেক বার বলেছি করোনার মধ্যে চেম্বারে যাওয়ার দরকার নেই। আমরা তিন ভাই চাকরি করি। বসে থাকেন বাসায়। তবুও আব্বু কথা শোনেননি। আমাদের বলেছেন, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে বসে থাকেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়া জরুরি। করোনার সময় অন্য চিকিৎসক রোগী দেখেন না। এখন আমিও যদি না দেখি তবে অসুস্থ মানুষ কোথায় যাবেন। এসব বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন চেম্বারে রোগী দেখতে।

নেওয়াজ ওয়াহিদ জিমি আরও বলেন, চেম্বারে গিয়ে সকাল-বিকেল রোগী দেখেছেন বাবা। বাড়িতে ফিরতেন রাত ৮টায়। কিছুদিন আগে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেছেন আমার চাচা। চাচার করোনা ছিল। এরপর কখন যে করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন আব্বু সেটি বুঝতে পারছি না। ১০-১২ দিন আগে আব্বুর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শুক্রবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন আব্বু।

সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, অর্থের মোহ ত্যাগ করে অসহায় মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন ডা. এবাদুল্লাহ। গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন সর্বত্র। তার অসুস্থতার খবর শুনে ব্যথিত হয়েছেন সবাই।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মানস কুমার বলেন, চিকিৎসক এবাদুল্লাহর করোনা পজিটিভ। তিনি জ্বর ও তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। তবে অবস্থা খুব বেশি ভালো নয় তার। এখন অবস্থা ভালো না খারাপের দিকে যাবে সেটি কিছুদিন না গেলে বলা যাবে না।