ভোলার মনপুরায় বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক উৎপল মণ্ডল। দূর থেকে দেখলে অনেকটা সবুজ বিষধর সাপের মতো দেখতে ১০ ফুট লম্বা এই চিচিঙ্গা।
স্থানীয় ভাষায় কেউ বলে রেখা, কেউ বলে কিচিন্দা, কেউ বলে কিচিঙ্গা। কিন্তু কৃষি বিভাগ ও বইয়ের ভাষায় যাকে বলা হয় চিচিঙ্গা।
করোনাকালীন মহাদুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক উৎপল মণ্ডল তার বাড়ির আঙিনায় শখের বসে শুরু করেন চিচিঙ্গার চাষাবাদ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত ফসল চাষ করে তিনি অনেকটাই সফলতা পেয়েছেন। নিজের পরিবারের দৈনন্দিন তরকারির চাহিদা মিটিয়ে এখন বাজারেও বিক্রি সম্ভব বলে জানান তিনি; যা ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে উপজেলার পেশাদার কৃষকসহ সব মহলের মাঝে।
প্রভাষক উৎপল মণ্ডল জানান, মূলত শখের বসেই মাত্র দুটি চিচিঙ্গার বীজ বপন করেন তিনি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় অবস্থিত শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে তার শ্বশুর ৪টি বীজ উৎপল মণ্ডলকে উপহার দেন। তার শ্বশুর ভারতের চেন্নাই থেকে এই বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গার বীজ নিয়ে আসেন।
তিনি আরও জানান, শ্বশুরের উপহার দেয়া ৪টি বীজ এনে তার মধ্যে দুটি বীজ বপন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্কুর বের হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে মাচাং দিয়ে গাছকে পরিচর্যা করতে থাকি। ৭ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই গাছে ফুল দেখা দেখা দেয়। ফুল হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চিচিঙ্গা দ্রুত বড় হয়ে ১০ ফুট লম্বা হয়ে যায়। তবে ফসল পাকা পর্যন্ত ১৫ ফুট লম্বা হয়। এই বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা গাছ ৯ থেকে ১০ মাস সময় পর্যন্ত জীবিত থাকে। জীবিত সময়ে একেকটি গাছ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত চিচিঙ্গা ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান, এই হাইব্রিড চিচিঙ্গা চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
এছাড়াও তিনি উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখে চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তিনি এসব গাছের পরিচর্যা করছেন। ইন্টারনেটে দেখে গাছের উচ্চফলনশীন ‘থ্রিজি’ কাটিং দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া নিজেই লিকুইড প্রাকৃতিক সার তৈরি করে গাছের পরিচর্যায় ব্যবহার করছেন। এছাড়াও পোকামাকড় থেকে রক্ষায় ফসলের গায়ে পলিথিন জড়িয়ে দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুরক্ষা বলয়।
এই প্রজাতির হাইব্রিড চিচিঙ্গা চাষাবাদ করে কম খরচে ও কম পরিশ্রমে সহজে বেশি লাভবান হবেন পেশাদার কৃষকরা। তাই ব্যবসায়িকভাবে চাষাবাদের জন্য পেশাদার কৃষকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
সূত্রঃ যুগান্তর
