হোসেনি দালানে হামলা: সাক্ষী না আসায় ঝুলে আছে বিচার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক : রাজধানীর হোসেনি দালানের সামনে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলার ঘটনার দুই বছরেও  মামলাটির বিচার কাজ শেষ হয়নি। সাক্ষী না আসায় ঝুলে আছে বিচারকাজ।

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্তেই সময় লেগেছে এক বছর। পরে আদালত চলতি বছরের মে মাসে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।

মামলার বাদী চকবাজার থানার তৎকালীন এসআই মো. জালাল উদ্দিন বিচার শুরুর প্রথম তিনটি ধার্য তারিখেই আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মামলার বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে সাক্ষী হাজিরের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে বিচারাধীন। আগামী ১৯ নভেম্বর মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাজহারুল হক বলেন,  এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের লক্ষ্যে বাদীর সমনসহ চকবাজার থানার ওসিকে তলব করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার বাদী চকবাজার থানার তৎকালীন এসআই জালাল উদ্দিন ডিএমপির উত্তর বিভাগে বদলী হয়েছেন। সেখানেও তার খোঁজ করা হচ্ছে। বাদীকে পাওয়া মাত্রই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া পিপি অফিস ও পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমেও বাদীকে খোঁজ করা হচ্ছে। মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাত পৌনে ২টার দিকে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। পরে এর তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।

তদন্ত শেষে ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১০ জঙ্গিকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ওই বছরের অক্টোবরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ৩১ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা  ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলী করেন। এরপর চলতি বছরের ১৫ জুন, ১৩ আগস্ট, ১৯ সেপ্টেম্বর মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার বাদী সাক্ষ্য গ্রহণ দিতে আদালতে হাজির হননি।

জানা গেছে, ওই হামলায় ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিন জঙ্গি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামির সবাই জেএমবির সদস্য। এরা হলেন- জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মোসায়েব, আরমান, কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, মাসুদ রানা, আবু সাঈদ সোলায়মান ওরফে সালমান, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহ জালাল, ওমর ফারুক ওরফে মানিক ও চাঁন মিয়া। আসামিদের শেষের চারজন জামিনে রয়েছেন। অপর ছয়জন কারাগারে। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে প্রথম তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলীতে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হন। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন অপর দুই জেএমবি কমান্ডার আবদুল বাকি ওরফে আলাউদ্দির ওরফে নোমান ও সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি ও আটজনকে হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীও ছিল হোজ্জা।

সূত্র: রাইজিংবিডি