হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ জনজীবন

শফিক আজম:
রাজশাহীতে প্রায় প্রতিদিনিই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে চাঁদাবাজি করছে হিজড়াদের কয়েকটি দল। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে তাদের উৎপাত বেড়েছে। হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর জনজীবন।
নগরীর অনেক সাথে কথা বলে জানা গেছে, কি দোকান মালিক কি পথচারী, হিজড়াদের এমন চাঁদাবাজির অভিযানে রেহায় পাচ্ছে না কেউই। হয় অশ্লীলতা আর নয়ত অকথ্য গালাগাল কোনটায় বাদ যায় না।তাদের চাঁদা দিতে না পারায় অনেকেই ভরা বাজারে মারধর শিকার হচ্ছেন। আবার রমজানে অশ্লীলতা ঠেকাতে বাধ্য হয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন অর্থ।
আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ। তাই গত কয়েক দিন ধরে শুরু হয়েছে হিজড়াদের চাঁদাবাজির অভিযান। নগরীর বাজার এলাকা যেমন সাহেব বাজার, গনকপাড়া, আলুপট্টি, নিউমার্কেট অলোকার মোড় এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়িই কোন কোন গ্রুপ চাঁদা আদায় করতে বের হচ্ছে। যদিও এদের মূল টার্গেট বিভিন্ন ব্রাণ্ডের শোরুম এবং বড় দোকানগুলো কিন্তু এবারে ছোটখাট দোকন গুলোও বাদ পড়েনি। তালিকায় জমা হয়েছে রিকশাওয়ালা এবং পানওয়ালা গুলোও।
জানা যায়, গত শুক্রবার নগরীর আলুপট্টি সংলগ্ন অটোমোবাইলের দোকানে অশ্লীলতার ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করে হিজড়ারা। মালিক অবশেষে ২ হাজার টাকা দিলে সেখান থেকে বিদায় নেয় তারা। পরক্ষনেই পানদোকানে গিয়ে চাঁদা আদায় করতে লাগে হিজড়াদের একটি দল। এ সময় পান দোকানের পাশে দাড়ানো শিমুল নামক এক যুবকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হিজড়ারা তাকে বেদম মারধর করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। অত:পর উলঙ্গ হয়ে অন্যান্য পথচারীদের নানা ভাবে গালাগাল দিতে থাকে। এ ঘটনা মোবাইলে ধারন করতে দেখলে অপর এক যুবকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে লাগে। সেখান থেকে দৌড় দিয়ে রক্ষা পায় ওয়াহিদ। আর এই সব কাণ্ড দেখতে জমায়েত হয় শতশত মানুষ। কিন্তু গালাগাল দিতে বাদ রাখেনি কাউকেই।
প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহিদ জানায়, রাস্তায় যাকে পাচ্ছে তাকেই গালাগাল করছে। আর একটু পর পর কাপড় খুলে ফেলছে। রোজা থেকে একটা মানুষ কতক্ষণ সহ্য করে। পাশেই থানা তাও এদের ভয় নাই। তারা দেদারসে অশ্লীলতা করে যাচ্ছে।আর কে কি বলবে তাদের। যে বলবে তাকে ধরে এমন অশ্লীলতা করবে।
রোববার নিউমার্কেট সংলগ্ন বিভিন্ন শোরুম গুলোতে দলে দলে প্রবেশ করে হিজড়ারা। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু। কোম্পানী বুঝে চাঁদা। আর বিলম্ব করলে বাড়তি ফি দিতে হবে। অত:পর দিতে না চাইলে দোকানের মেইন গেটে ভীড় করে দাড়ায় হিজড়ারা।
নিউমার্কেট সংলগ্ন স্যাণ্ডেল এর শোরুম গ্যালারী এপেক্স-এর ম্যানেজার মেহেদী হাসান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, প্রতি ঈদে এদের টাকা দিতে হবেই। আর এদের চাঁদা না দিলে দোকানে কাষ্টমার বের করে দেয়। দরজার সামনে এসে খারাপ ভাষায় গালি দিয়ে অশ্লীলতা করে। আর পদে পদে কাপড় খোলার হুমকি দেয়। আত্মসম্মান বোধে তাদের হাতে টাকা ধরিয়ে দিতে হয়। এবারো ২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এই বাড়তি অর্থটা কোম্পানী আমাদের দিবে না।
কর্মচারী তুহিন বলেন, এরা এসে প্রথমে টাকা দাবি করে। টাকা না দিতে চাইলে যে বেশি অশ্লীলতা করে তাকে দিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করে। বলে, সোজা মেশিন কেটে ফেলব। তাড়াতাড়ি টাকা না দিলে একটা কাষ্টমার ঢুকতে দিব না। শেষমেষ বাধ্য হয়েই তাদের টাকা দিয়ে বিদায় দিতে হয়।
মূলত তারা তাদের এলাকার বিভিন্ন দোকান পাট আর বাজারে গিয়ে টাকা তোলে এই অর্থকে তারা তোলা বলে এছাড়াও কোন নবজাতকের জন্ম হলে সেখানে গিয়ে নাচ-গান করে চাঁদা তোলে তারা। তারা তাদের জমাকৃত সকল টাকা তাদের গুরুর কাছে দিয়ে দেয় এরপর গুরু যা দেয় তা থেকে প্রসাধনী কেনে আর ব্যাংকে জমা রাখে। তাদের খাবারের বন্দোবস্ত তাদের গুরুই করে ।
জানা গেছে, ভারতে এবং বিভিন্ন দেশে এদের লোভী বয় বলা হয় । কোনকালেই কোন দেশেই হিজড়াদের কোন সম্মান কেউ দেয়নি । বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবেই স্পষ্ট বলছে।
সাহেব বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানে প্রতিদিনই হিজড়াদের আগমন হয়। আর সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা থাকায় তাদের কাছে ইচ্ছা মতো চাঁদা আদায় করা হয়। বাদ পড়েনি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোও। রাস্তার ধারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছেও ইচ্ছামতো চাদা আদায় করছে হিজড়ারা। আর বাজার এলকায় চাঁদা সংগ্রহ শেষ হলে ফেরার পথে পান দোকনগুলোতে শুরু হয়।
হিজড়াদের এমন অশ্লীলতায় আর চাঁদাবাজিতে অসহায় সাধারণ মানুষ। হিজড়াদের এমন অসভ্যতায় আর ব্যভিচারে তাদের শাস্তির দাবি করেছেন দোকানি আর বাজারে অবস্থানরত সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি প্রশাসনকে অবশ্যই জনতার ভোগান্তির কথা চিন্তা করে হিজড়াদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোতে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখভাল করছে। হিজড়ারা যাতে মানুষজনকে হেনস্ত করতে না পারে অথবা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় না করতে পারে-এ বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বলা আছে। তারাই মানুষকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করছে।

স/মি