হারিয়ে যাচ্ছে পালবাড়ি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গ্রামের নাম সিন্দুরী। দেশ বিভাগের আগে এই গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাস করতেন। লোকেমুখে শোনা যায়, হিন্দু বৌদিদের মাথার সিঁদুরের রং থেকে নাকি এই গ্রামের নামকরণ।

তবে কালের বিবর্তনে গ্রামটিতে এখন আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেখা মেলে না।

দেশ বিভাগের পর থেকেই শুরু হয়েছে তাদের অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রা। পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছেড়ে তারা খুঁজে নিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়। তবে মাটিকে ভালোবেসে এখনো যারা পড়ে আছেন, তাদের সংখ্যা একেবারেই কম।

পূর্বপুরুষরা না থাকলেও তারা ধরে রেখেছেন তাদের পেশা। নরম লোনা মাটি দিয়ে হাঁড়িপাতিল বানিয়ে চলে তাদের সংসার।

ভিটেবাড়িই তাদের শেষ সম্বল। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন, তবে পরিমাণে নগণ্য। তাদের মূল আয় আসত মৃৎশিল্প থেকে। প্রতিদিনের বাজার সদাই চলত মাটির হাঁড়িপাতিল বিক্রির টাকায়।

তবে প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। একসময় মানুষ মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না করলেও এখন তার জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার, মেলামাইন আর প্লাস্টিক। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুমার সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পটি।

সিন্দুরী গ্রামের রামপাল এ প্রতিবেদককে জানান, এখন আর মাটির পাতিলে ভাত রান্না করে না মানুষ। গ্রামেও এখন অ্যালুমিনিয়াম, সিলভারের পাতিল ব্যবহার করা হয়। তবে মাটির টব, ব্যাংক, খেলা ইত্যাদি টুকটাক বানানো হয়। আয় নেই বললেই চলে। শুধু বাপ-দাদার পেশা আর নিজের শখের বসে এই কাজ করে যাচ্ছি।

‘মাটির হাঁড়ি পাতিল বানিয়ে এখন সংসার চালানো দায়। তাই অন্য কাজ করব বলে ভাবছি,’ বলেন তিনি।

আগে পালবাড়ির পাশ দিয়ে গেলেই পোড়া মাটির গন্ধ পাওয়া যেত। এখন আর সেই সব নেই কুমার বাড়িগুলোতে।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়ায় ও ব্যবসা লাভজনক না হওয়ায় অনেকে বাব-দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

একই গ্রামের ৭০ বছর বয়সী কৃষক মান্নাফ জানালেন, এই গ্রামে পালসহ অন্যান্য বংশের প্রায় ৩০টির মতো পরিবার ছিল। মাটির হাঁড়ি পাতিল বানিয়ে তাদের সংসার চলত। এখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাত্র দু-একটি পরিবার আছে। বাকিদের বেশিরভাগই পাড়ি জমি

https://youtu.be/KU1bW_7udKc