‘হামার কৃষকের একটেও ভালো নাই বাহে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

হামার কৃষকের একটেও ভালো নাই বাহে। আগুর ধান উৎপাদন করবার না পাইলে রবি ফসলও হবার নয়। ছাওয়া-পোয়া নিয়ে না খ্যায়া থাকা নাগবে।’

বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ় বিদায় নিয়েছে। তবু নেই বারিধারা। পানির অভাবে উচুঁ জমিতে লাগানো ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। ফলে চারা রোপণ করতে দেরি হচ্ছে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তালুক উপাসু গ্রামের কৃষক রবিউল তাই আক্ষেপ করে বলছিলেন কথাগুলো।

শস্যভাণ্ডার খ্যাত রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফসল রোপা আমন ধান। তবে এবার তা খরার কবলে পড়ার আশঙ্কা।

উঁচু জমিতে পানি না থাকায় বড় গৃহস্থরা সেচযন্ত্র বসিয়ে নিয়েছে। জমি কাদা করে চারা রোপণ করলেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা বৃষ্টিনির্ভর। তবে সম্পূরক সেচ প্রদানে কৃষকদের সেচযন্ত্র বসানোর পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

ইতিমধ্যে খরা মোকাবেলায় আমন আবাদে দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সম্পূরক সেচ দেওয়া শুরু করেছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে তুলনামূলকভাবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম। তবে পরিমাণে কম হলেও এলাকাভিত্তিক হচ্ছে বৃষ্টিপাত।

চলতি মাসে রংপুরে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৬২ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর মধ্যে ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত চার দিনে হয়েছে ৫৯ দশমিক ৩  মিলিমিটার, ৮ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত দুই দিনে ১ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং ১৬ জুলাই মাত্র ১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এ জেলায় গত ১০ দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছে  স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস আরো  জানায়, প্রচণ্ড খরতাপ বিরাজ করছে রংপুর অঞ্চলে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমন আবাদে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে আমনের চারা লাগানোর ধুম পড়েছে। তবে উঁচু ও মাঝারি জমিতে পানির অভাব। সেখানে চারা লাগাতে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। আগে রোপণ করা ক্ষেতের চারা মরে যাচ্ছে। স্বচ্ছল কৃষকরা শ্যালো মেশিন চালিয়ে জমি তৈরি করছেন। অনেকে স্থানীয় পদ্ধতি দোন, সেঁউতি কিংবা বালতি দিয়ে পানি সেচের মাধ্যমে চেষ্টা করছেন চারা বাঁচানোর।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি গ্রামের গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার ও দিলশাদ আলী সেচযন্ত্রের পানি দিয়ে জমি কাদা করছিলেন। তাঁরা জানান, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন ধান এতদিন বৃষ্টিনির্ভর ফসল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন আবহাওয়ার বিপর্যয়ের কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি বছর পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৩২ মেট্রিকটন চাল। জেলা অনুযায়ী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো রংপুরে এক লাখ ৬৪ হাজার ১৫৯ হেক্টর, গাইবান্ধায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৪৯ হেক্টর, কুড়িগ্রামে এক লাখ ১৫ হাজার ২৭৬ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর এবং নীলফামারীতে এক লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ হেক্টর।

এ পর্যন্ত এসব জেলায় মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।

অন্যদিকে, রোপা আমন ধান আবাদে খরা মোকাবেলায় বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থেকে গত ১৬ জুলাই সম্পূরক সেচ প্রদান শুরু হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি এলাকার চাষি আমিনুর রহমান ও জলঢাকার মজনু রহমান বলেন, ‘সেচ ক্যানেলের পানিতে হামার রক্ষা হইলো। তা না হইলে যে খরা শুরু হইচে তাতে ধানের চারা নগবার কোনো উপায় আছিল না।’

গত কয়েকদিন ধরে ক্যানেলের পানি পেয়ে এলাকায় চারা লাগানোর ধুম পড়েছে বলেও জানান তাঁরা।

এই অঞ্চলে খরা বিরাজ করছে উল্লেখ করে সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারি বলেন, ‘তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় ৬৫ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সম্পূরক সেচ প্রদান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় সাত হাজার হেক্টর, জলঢাকায় ১৩ হাজার হেক্টর, কিশোরগঞ্জে পাঁচ হাজার হেক্টর, নীলফামারী সদরে ৩০ হাজার হেক্টর, রংপুরের তারাগঞ্জে পাঁচ হাজার হেক্টর এবং গঙ্গাচড়ায় পাঁচ হাজার হেক্টর।

এ বছর বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না উল্লেখ করে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, রোপা আমনের চারা লাগানোর এখনো অনেক সময় রয়েছে। তবে যারা ব্রিধান-৩৩, বিনা-৭সহ স্বল্পমেয়াদি রোপা আমন ধান কাটার পর আলুসহ আগাম রবি ফসল চাষ করবেন তাদেরকে সেচের মাধ্যমে চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।