রবিবার , ৩ জুলাই ২০১৬ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হামলাকারী কারা

Paris
জুলাই ৩, ২০১৬ ২:৫২ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ ওকিচেনে হামলা-কারীরা সংখ্যায় সাতজন ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। এরা সবাই দেশি দুটি উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সদস্য। যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে এদের মধ্যে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। হামলাকারীদের মধ্যে সৌরভ নামের একজনকে আহত অবস্থায় আটক করা

হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। তবে এদের মধ্যে একজন নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বলেছে, ঢাকার গুলশানে ক্যাফেতে এরাই হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে হত্যা করেছে। রাত ১০টার দিকে সাইটের টুইটার অ্যাকাউন্টে ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়। রাইফেল হাতে এই তরুণদের ছবিগুলো কখন তোলা, তাও স্পষ্ট নয়। এদিকে টেররিজম মনিটরের টুইটার অ্যাকাউন্টে একই তরুণদের ছবি দিয়ে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আবু উমর, আবু সালাম, আবু রহিম, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব।

সাইট ইন্টেলিজেন্সের ছবি প্রকাশের ঘণ্টাখানেক পর ওই হামলাকারীদের মৃত অবস্থার ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। কিছুটা বিকৃত হয়ে যাওয়া ছবিগুলোর সঙ্গে সাইট প্রকাশিত অন্তত তিনটি ছবির মিলও পাওয়া যাচ্ছে। ছবির সঙ্গে পাঁচ সন্ত্রাসীর নামও পাঠিয়েছে পুলিশ। এরা হলো : আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। তারা জেএমবির পলাতক সদস্য বলেই জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়নি। তাদের নাম-পরিচয় সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক দাবি করেছেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী ছয় জঙ্গিই বাংলাদেশি। এর মধ্যে পাঁচজন ছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত। এদের খোঁজা হচ্ছিল। গতকাল শনিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গুলশানের ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ওসি সালাহউদ্দিন এবং ডিবির এসি রবিউল করিমের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানে অংশগ্রহণকারী র্যাব-পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ধরন দেখে মনে হয়েছে হামলাকাকারীরা জেএমবির সদস্য। তবে হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত একজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হয়েও কাজ করে আসছিল। এটি একটি যৌথ জঙ্গি হামলা। ইতিপূর্বে দেশে বিদেশিদের জিম্মি পরে হত্যার ঘটনা আর ঘটেনি। হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে এমন অত্যাধুনিক অস্ত্রও দেখা যায়নি।

ধারালো অস্ত্র দিয়ে এত বিদেশি হত্যার ঘটনাও দেশে এই প্রথম। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে জঙ্গিরা যে কায়দায় হত্যা করে ঠিক একই কায়দায় জিম্মি বিদেশিদের হত্যা করা হয়েছে। জেএমবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিরাই ইতিপূর্বে এভাবে জবাই করে নৃসংশভাবে মানুষ হত্যা করেছে। এ দুটি জঙ্গি সংগঠনের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেই কাজ করছিল বলে ধারণা মিলেছে। আবার তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্কও থাকতে পারে।

হতাহতদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন আটক করে গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হামলাকারীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে বিদেশিদের হত্যার আগে বাংলাদেশিদের সামনে তাদের নানাভাবে নির্যাতনের তথ্য মিলেছে। ওই সময় জঙ্গিরা আল্লাহ হু আকবার ধ্বনি দেয়।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, ঘটনাস্থল থেকে আটক একমাত্র জঙ্গি সদস্যের নাম সৌরভ। এটা তার আসল নাম নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সৌরভ ঘটনার সময় ভোরের দিকে প্রচণ্ড গুলাগুলির মধ্যে রেস্তোরাঁর পেছন দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সে সময় তাকে আটক করা হয়। ওই যুবককে যখন আটক করে গাড়িতে তোলা হয় তখন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, তার সারা শরীর রক্তাক্ত। সে খালি গায়ে ছিল। তাত্ক্ষণিক জানতে চাইলে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তার বুকে ছররা গুলি লেগেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৌরভ তার নিজের নাম ছাড়া কিছুই বলছে না।

এদিকে গতকাল রাত ১০টার দিকে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হামলাকারীর ছবিগুলো প্রকাশ করে। রাইফেল হাতে এই তরুণদের ছবিগুলো কখন তোলা, তাও স্পষ্ট নয়। আইএসই এই ছবি প্রকাশ করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইটটির পরিচালক রিটা কাটজ তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেন, যার তত্পরতা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। রিটা কাটজের টুইটে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ হামলায় পাঁচ হামলাকারীকে চিহ্নিত এবং ছবি প্রকাশ করেছে আইএসআইএস।’ ছবিগুলোর সত্যতা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা যায়নি।

অন্যদিকে পুলিশও গতকাল রাতে নিহত পাঁচজনের লাশের ছবি প্রকাশ করেছে। দুই ছবি যাচাই করে অন্তত তিনজনের চেহারার মিল দেখা গেছে। বাকি দুজনের মধ্যে একজনের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন, নিহত লাশের ছবিতে ওই ব্যক্তির বয়স বেশি। অন্য ব্যক্তির ছবি একই কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে দুই ছবি বিশ্লেষণ করেই দেখা গেছে, নিহত তিন-চারজনের মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আছে। তাদের বয়সও একই রকম। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিহতদের ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। এতে জানা গেছে, তাদের নাম আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। তাদের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। নিহত জঙ্গিরা জেএমবির সদস্য। তারা নাম-পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনামে চলাফেরা করে।

আইএসের দায় স্বীকারের পেছনে ‘অন্য কারণ’ রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন পুলিশ প্রধান শহীদুল হক।

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে আইএস দায় স্বীকার করে। আমেরিকায় হামলার ঘটনা ঘটলেও আইএস দায় স্বীকার করে। আইএসের দায় স্বীকারের লিংক খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, রেস্তোরায় হামলার মূল উদ্দেশ্য কী তা এখনই বলা যাবে না। তবে এ হামলায় দেশি বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাদের ইন্ধন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ থাকতে পারে। হামলাকারীরা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানের সময় এরাও রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে গুলি চালায় এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোর পর হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের সুপারভাইজার সুমন রেজা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। ঘটনাস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “প্রতিদিনের চেয়ে আজ (শুক্রবার) আমাদের গেস্ট ছিল কম। রাত সোয়া ৮টার দিকে অন্তত ৬-৭ জন অস্ত্রধারী যুবক রেস্তোরাঁয় ঢুকেই অস্ত্রের মুখে প্রথমে বিদেশিদের জিম্মি করে। তাদের কাছে চাপাতি দেখেই মনে হয়েছে, রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা হয়েছে। ওরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলে গুলি ছোড়ে।

যদিও এরই মধ্যে এ হামলার দায়দায়িত্ব জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এক টুইট বার্তায় আইএসের পক্ষে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এটি চলমান জঙ্গি হামলারই অংশ। হামলাকারীরা জঙ্গি দলের সদস্য।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়