হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফীর মাদ্রাসায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আহমদ শফীর বিরুদ্ধে জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক ছাত্রদের বিক্ষোভ থেকে বুধবার মাদ্রাসাটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভ থেকে মাদ্রাসায় আহমদ শফীর সমর্থক শিক্ষকদের দু’জনের ওপর হামলা এবং অফিস কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আহমদ শফী এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে সরে যাওয়ার দাবি তুলেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক ছাত্ররা বুধবার দুপুরের পর মাদ্রাসায় বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা মাদ্রাসাটির প্রধান বা পরিচালক আহমদ শফির বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দেয়। মি: শফির ছেলে আনাস মাদানীও এই মাদ্রাসার শিক্ষক।

বিক্ষোভকারীরা মি: মাদানী সহ আহমদ শফির সমর্থক কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর করে। মি: শফীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত মাদ্রাসারটি শিক্ষক মঈনউদ্দিন রুহীর ওপর হামলাও করেছে বিক্ষোভকারীরা।

এই বিক্ষোভের মধ্যে আহমদ শফী মাদ্রাসায় তার অফিসে ছিলেন বলে জানা গেছে।

হাটহাজারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাকসুদ আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, দুই পক্ষে দ্বন্দ্বের জেরে এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আবাসিক এই মাদ্রাসায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

মি: আলম আরও জানিয়েছেন, জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক বিক্ষোভকারী ছাত্ররা মাদ্রাসায় রাত ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করে।

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হাসান বলেছেন, তার নেতৃত্বে পুলিশ মাদ্রাসার বাইরে অবস্থান নিয়ে ছিল। রাত ১১টার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতে এই বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক শিক্ষকরাই মূলত উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক থেকে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তা সেখানে ঘোষণা করা হলে রাত ১১টার পর বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করেন।

এই কমিটি আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর আবার বৈঠকে বসবে বলে জানানো হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি লিফলেটও সেখানে বিলি করেছিল।

সেই লিফলেটে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের দাবি করা হয়। এটিই তাদের এক নম্বর দাবি ছিল। এছাড়াও আহমদ শফীকে মাদ্রাসার প্রধান বা পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবিও করা হয়।

আহমদ শফীর সমর্থক একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক শিক্ষকরা বহিরাগত কিছু লোক মাদ্রাসায় এনে একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে মাদ্রাসার দখল নিয়েছিল। এই উত্তেজনা সৃষ্টিকারীরাই নিজেরা বৈঠক করে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা সহ নানা রকম সিদ্ধান্তের কথা বলেছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থক একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মাদ্রাসায় নানা অনিয়মের কারণে চুড়ান্ত পর্যায়ে এসে মাদ্রাসার ছাত্ররাই বিক্ষোভ করেছে।

সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর এই মাদ্রাসা কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

কারণ হেফাজতে ইসলামে আমীর আহমদ শফী এবং মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।

কিন্তু আহমদ শফী এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

মি: শফীর বয়স একশ বছরের বেশি হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে তার পরেই জুনায়েদ বাবুনগরীর অবস্থান ছিল। কিন্তু কয়েকমাস আগে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে তার সমর্থকরা পরিচালনা কমিটির বৈঠক করে মি: বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহকারি পরিচালকের পদ সরিয়ে দেয়। তখন দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সূত্র: বিবিসি বাংলা