হাওরের নি:স্ব মানুষের এলাকা ছেড়ে শহরে পাড়ি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: উত্তর-পূর্বে সুনামগঞ্জে হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার অপ্রতুলতা নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এলাকার মানুষজন ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে অভিযোগ করেছেন সাহায্য পর্যাপ্ত নয় এবং যাও বা আসছে তাতে সমন্বয়ের অভাব।

ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তবে সরকার বলছে, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখতে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন।

পাহাড়ী ঢল, অতিবৃষ্টি এবং বাঁধ ভেঙ্গে সুনামগঞ্জের সবক’টি হাওরে অথৈই পানিতে সেখানকার অসহায় মানুষের মাঝে এখন শুধুই হাহাকার। ধানের পর মাছও নষ্ট হয়েছে।

এখন কয়েকটি জায়গায় কয়েকটি গরু এবং ছাগলের মৃত্যুতে নতুন আতংক দেখা দিয়েছে। চারদিকে পানি আর পানি। কিন্তু মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব হয়েছে।

প্রত্যন্ত গ্রামের একজন কৃষক জুয়েল চৌধুরী বলছিলেন,এখন সবদিকেই তাদের অভাব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে, এমন কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা ঘুরে এসে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সেই সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সরকারি ত্রাণের অপ্রতুলতা এবং সমন্বয়হীনতা-সহ নানান অভিযোগ করেছেন।

সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলছিলেন, পরিস্থিতির বয়াবহতার বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচানোর তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করছেন।

“অনেক গ্রাম থেকে অনেক মানুষ বাড়ি-ঘর তালা দিয়ে মাসুম বাচ্চাসহ পরিবার নিয়ে ঢাকা,সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে।তাঁরা একেবারে নি:স্ব হয়ে গেছে।”

এই জনপ্রতিনিধি কামরুজ্জামান কামরুল আরও বলছিলেন, “হাওর অঞ্চলে পরিবারগুলোতে সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি। সাতজনের কম সদস্য নেই কোনও পরিবারে। কিন্তু একটি পরিবারকে এক মাসের জন্য ৩০ কেজি চাল এবং পাঁচশ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।এতে তাদের জীবন চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়।”

ক্ষতিগ্রস্তদের একটা অংশ অন্য শহরে ছুটছেন কাজের আশায়।আরেকটা অংশ খোলা বাজারে চাল নিতে বা জানপ্রতিনিধিদের কার্যালয়ে ভিড় করছেন সাহায্যের জন্য।

কিন্তু একটু অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা হাত পাততে না পেরে চরম অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। যেমনটা বরছিলেন প্রথম পানিতে তলিয়ে যাওয়া নলুয়া হাওর এলাকা থেকে মুক্তাদির আহমেদ।

“নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা গৃহস্থরা খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছে।তারা চক্ষুলজ্জার কারণে তাঁরা সাহায্যের জন্য যেতে পারছে না, কারও কাছে হাত পাততে পারছে না।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন নঈম ওয়াহারা। তিনি বলছিলেন, সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর ঘুরে তাদের মনে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের কমপক্ষে এক বছরের সহায়তা প্রয়োজন।

“হাওরে কৃষকদের বড় অংশ সুদে ঋণ বা দাদনের টাকা নিয়ে আবাদ করেছিলেন।আগামী বছর ফসল না হওয়া পর্যন্ত তারা ঋণের টাকাও শোধ করতে পারবেন না।ফলে তাদের নি:স্ব এই মানুষগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করা প্রয়োজন”, বলছিলেন মি ওয়াহারা।

তবে ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের সচিব শাহ কামাল বলছিলেন, প্রাথমিকভাবে একটি পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৩০কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত এক বছরের জন্যই সমন্বিতভাবে সহায়তা কর্মসূচি তারা নিয়েছেন।

“কৃষি মন্ত্রনালয় কৃষি ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের কর্মসূচি নিয়েছে।এছাড়া ত্রাণ,স্বাস্থ্য এবং পানিসম্পদসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয় সমন্বিতভাবে দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।হাওরের ৬টি জেলার প্রতিটিতে ১৫কোটি করে টাকা দেয়া হয়েছে কর্মসংস্থানের জন্য”, জানিয়েছেন সচিব।

তবে সহায়তার এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকবে, এখন ক্ষতিগ্রস্তরা সেটাই চাইছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা