এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর আগে স্ত্রী লিপিকার আবেগঘন পোস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় চিকিৎসা ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোর। দেশের প্রখ্যাত এ শিল্পী দুলাভাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। ডা. বিপুল বিশ্বাস নিজেও একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তিনিও আর বাঁচাতে পারলেন না খ্যাতিমাণ শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে রোববার সকালেই এন্ড্রু কিশোরের অবস্থার আবার খারাপ হয়ে যায়। পরে ওইদিন রাতেই এন্ড্রু কিশোরের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়েছিলেন স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। প্রাণ খুলে দোয়া চেয়েছিলেন সবার কাছে। ওই পোস্টে তিনি এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় লিখেছেন। আবেগঘন ওই পোস্টে ভাল কোন খবর ছিল না।

লিপিকা লেখেন, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর তারা সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। সেখানে এন্ড্রু কিশোরের ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি শেষ হয় এপ্রিল মাসে। চিকিৎসক বলেছিলেন, এখন আর কিছু দরকার নাই। ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন, আগস্ট মাসে যেতে। তারা ১৩ মে দেশে আসার জন্য টিকেট কাটেন। কিন্তু কিশোর শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিলেন। তাই ইতি টিকিট বাতিল করেন। চিকিৎসক বলেন, কেমোর জন্য এন্ড্রু কিশোর দুর্বল। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে, সময় লাগবে।

পরে ১০ জুন তারা আবার টিকিট কাটেন। কিন্তু হঠাৎ ২ জুন কিশোরের হালকা জ্বর আসে। পরদিন রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তাই ৪ জুন হাসপাতালে ভর্তি করেন চিকিৎসক। কিন্তু জ্বর বার বার আসতে থাকে। কোন ওষুধ তার শরীরে কাজ করছিল না। চিকিৎসক বলেছিলেন, ক্যানসার আবারও আসছে কিনা তা দেখতে হবে। পরীক্ষার পর দেখা যায় এন্ড্রু কিশোরের শরীরে সেটিই ঘটেছে।

দ্বিতীয়বার ক্যানসার ধরা পড়ায় এন্ড্রু কিশোর দেশের ফেরার সিদ্ধান্ত নেন জানিয়ে লিপিকা লেখেন, ‘কিশোর ডাক্তারকে বলে, তুমি আজই আমাকে রিলিজ করো, আমি আমার দেশে মরতে চাই, এখানে না, আমি কাল দেশে ফিরব। আমাকে বলে, আমি তো মেনে নিয়েছি, সব ঈশ্বরের ইচ্ছা, আমি তো কাঁদছি না। তুমি কাঁদছ কেন? কিশোর খুব স্বাভাবিক ছিল, মানসিকভাবে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। যেদিন থেকে জ্বর এসেছিল সেদিন থেকে। কিশোর হাইকমিশনে ফোন করে বলে, কালই আমার ফেরার প্লেন ঠিক করে দেন। আমি মরে গেলে আপনাদের বেশি ঝামেলা হবে, জীবিত অবস্থায় পাঠাতে সহজ হবে। ১০ জুন বিকালে হাসপাতাল থেকে ফিরি এবং ১১ জুন রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফিরে আসি আমরা।’

তিনি লেখেন, ‘ঈশ্বরের কি খেলা, ১০ জুন আমরা সম্পূর্ণ পজিটিভ রেজাল্ট নিয়ে ফিরতে চেয়েছিলাম। অথচ ১১ জুন ফিরলাম পুরো নেগেটিভ রেজাল্ট নিয়ে। আমি ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম আর কতদিন? সে এটা লিখেছিল- ভবিষ্যৎবাণী করা কঠিন। তবে সাধারণত মাস থেকে বছর। এখন কিশোর কোন কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কি ভাব, বলে কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিও না।

এ ব্যাপারে এটা শেষ পোস্ট উল্লেখ করেছিলেন লিপিকা। লেখেন, ‘এটাই শেষ পোস্ট, এর পর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। কিশোর থাকবে না, অথচ আমি থাকব। মেনে নিতে পারছি না। এই অসময়ে সবাই সাবধানে থাকবেন। নিজের প্রতি যত্ন নিবেন, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন। আর এন্ড্রু কিশোরের প্রতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন। প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।’

স/আর