স্বতন্ত্ররা ছাড় পেলেও শাস্তির মুখে পড়তে পারে কারা?

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

প্রতীক বরাদ্দের পর গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা। প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম, এ অঞ্চল থেকে সে অঞ্চল। এবারের নির্বাচন বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। এ নির্বাচনকে ঘিরে বেশ চাপ রয়েছে পশ্চিমাদের। কেননা বিএনপিসহ সমমনা বেশ কয়েকটি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

তবে সরকারের বক্তব্য এবারের নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিশেষ ছাড় দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে বেশ কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে দলীয় প্রার্থীদের।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা বলা হলেও তাদের সমর্থক আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নির্বাচনের পর সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দেয়ার কথা থাকলেও সে নিদের্শের তোয়াক্কা না করে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড়-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটকে সাময়িকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

সম্রাটকে এভাবে রেলমন্ত্রীর অব্যাহতি দেয়া নিয়ে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। বহিষ্কার পাওয়া সম্রাট একটি গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন গত বুধবার চৌরঙ্গি এলাকায় প্রকাশ্য নির্বাচনী সমাবেশে সাময়িকভাবে আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দেন। পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ার বকুলের হাতে।

পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেখানে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছেন, সেখানে রেলমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম সুজন তা মানেননি। তিনি দলের কোনো বৈঠক না করেই জেলার সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আনোয়ার সাদাত সম্রাট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, এ অবস্থায় তার পক্ষে দলের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ার বকুলকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সম্রাটকে দল থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। ‘তাহলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বকুলকে কীভাবে দায়িত্ব দেয়া হলো’ এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তরও তিনি দিতে পারেননি।

এদিকে আনোয়ার সাদাত সম্রাটের বিরুদ্ধে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ নিয়ে কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। এ সময় তাদের কেউ কেউ বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সম্রাট নির্বাচনে থাকায় তার পক্ষে দলের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে নিজে পঞ্চগড়-২ আসনে প্রার্থী হয়ে নূরুল ইসলাম সুজন কীভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন।

বিষয়টি ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টিতে আনা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আনোয়ার সাদাত সম্রাট জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তিনি কথাও বলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, কাউকে দল থেকে বহিষ্কার কিংবা সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়ার সাংগঠনিক ক্ষমতা শুধু কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের। এ ক্ষেত্রে জেলা কমিটির কেবল সুপারিশ করার সুযোগ রয়েছে। রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেছেন, পঞ্চগড়ের সাধারণ সম্পাদককে সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ এখনও কেন্দ্রে আসেনি।

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, অতীতে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হতো। কিন্তু এবারের নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তারা ছাড় পাচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তির সিদ্ধান্ত না থাকলেও তাদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীর দুশ্চিন্তা বেড়েছে।

এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম তালেব হোসেন তার এলাকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, নৌকার লোকেরা পালানোর পথ পাবে না।

স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করছেন দলের অনেত গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে দলের পদ-পদবিতে থাকা নেতাদের মধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন করবেন, তাদের ব্যাপারে নির্বাচনের পর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।