স্নাতকোত্তর পাশ করে দুর্গাপুরের রাশেল এখন জেলে!

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দুর্গাপুরের মাড়িয়া গ্রামের একটি পুকুরে শীতের সাতসকালে কয়েকজন জেলে মাছ শিকার করছিলেন । পুকুর মালিক খালেদা আক্তারের পুকুর থেকে জেলেদের দিয়ে মাছ শিকার করে নিয়ে বাজারজাত করবেন। আর মাছ শিকারের বিনিময়ে ওই জেলেরা সামান্য কিছু টাকা পাবেন। সেই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিবেন জেলেরা। জেলেদের মধ্যে ৫ জন যুবক। অপর তিনজন মধ্যবয়স্ক। এই যুবকদের মধ্যে একজন লম্বায় প্রায় ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি। চেহারার ছাপেও জেনে শিক্ষিত শিক্ষিতভাব। যে কেউ কথা এবং আচার-আচরণে একটু সময় খেয়াল করলেই বুঝে নিবেন ছেলেটি নিশ্চয় শিক্ষিত। শিক্ষিতই বটে। কিন্তু কাজ করে যাচ্ছিলেন সমানে। নাম তাঁর রাশিদুল হক রাশেল (২৭)।


রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন রাশেল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে চাকরি-বা ব্যবসা-বাণিজ্য জুটেনি কপালে। তাই পাখিডাকা ভোরে আড়মোড়া ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন ছুটে যেতে হয় সহকর্মী জেলেদের সঙ্গে অন্যের পুকুরে মাছ শিকার করতে। স্নাতকোত্তর পাশ করার পর থেকেই সংসার চালাতে এ পেশায় যোগ দেন রাশেল। পড়া-লেখা করার অবস্থায়ও কখনো কখনো মানুষের জমিতে কাজ করেও খরচ জুটিয়েছেন। এখন অভাব-অনটনের সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটে চলেন জাল কাঁধে নিয়ে অন্যের পুকুরে মাছ শিকার করতে। পুকুরের আকার অনুযায়ী এক থেকে ৪ হাজার টাকা করে পান তারা। সেই টাকা জেলেদের সংখ্যানুপাতিক হারে ভাগ করে নেন রাশেলরা। এভাবেই গত দুই বছর ধরে জেলে পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন-জীবিকার যুদ্ধে নেমেছেন শিক্ষিত বেকার যুবক।


রাশেল ইসলাম জানান, তার বাড়ি দুর্গাপুরের জয়কৃষ্ণপুর মধ্যপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর আবুল কালামের ছেলে। সংসারে রাশেলের স্ত্রীসহ এক বোন ও বাবা-মা রয়েছেন। ছোট বোন রোকেয়া খাতুন বানেশ্বর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। রাশেল ২০১৮ সালে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেই বিয়ে করেন। কিন্তু চাকরি আশায় বসে না থেকে সংসারের ঘানি টানতে নেমে পড়েন জেলেদের সঙ্গে মাছ শিকারের পেশায়। তাঁদের জেলেদের মধ্যে সর্দার হলেন শাহজাহান আলী।


তিনি  বলেন, ‘আমার দলে কখনো কখনো ১৩-১৪ জন সদস্য হয়। পুকুরের আকার অনুযায়ী সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হয়। যত বড় পুকুর হবে, জাল টানা এবং মাছ শিকার ও মাছ পুকুর থেকে গাড়ী পর্যন্ত পৌঁছাতে তত বেশি লোকের দরকার হয়। তবে সর্বনিম্ন একটি ছোট পুকরের জন্যেও অন্তত ৭-৮ জন লোক প্রয়োজন হয়। এর সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যার মধ্যেও রাশেলের ঠাঁই হয়। কারণ সে পরিশ্রমি ছেলে। তাকে ছাড়া মাছ ধরা (শিকার) কঠিন হয়ে পড়ে। পরিশ্রমি বলেই টাকার অভাবে চাকরি-বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে না পারলেও আমাদের সঙ্গে জেলে হিসেবে পেশা বেছে নিয়েছে। এখন কেউ যদি তাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তাকে আর এতো কষ্ট করতে হবে না।’

রাশেল বলেন, ‘একটা চাকরির আশায় দিনে মাছধরা কাজ করলেও এখনো রাত জেগে পড়া-শোনা করি। কিন্তু কে দিবে আমাকে চাকরি? আবার সংসার চালানোর জন্য বসে থাকাও যায় না। তাই চাকরির আশায় বসে না থেকে নেমে পড়েছি মাছধরা কাজে। এখন জেলে হিসেবেই চিনে সবাই। কিন্তু এতো পড়া-শোনা করে কি লাভ হলো আমার, যদি সারাজীবন এই জেলে হিসেবেই কাটাতে হয়?

স/আর