স্থানীয় আ.লীগ, রাবি প্রশাসন ও ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদেরকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে’

 

রাবি প্রতিনিধি:

সাধারণ শিক্ষার্র্থী নয় প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। তবে এটিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বলে প্রচার করলে এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয় বলে দাবি করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ে প্রগতিশীল আটটি ছাত্র সংগঠন।  আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেন।

বিবৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (লেলিনবাদী) সভাপতি রিদম শাহরিয়ার, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের পক্ষে তারেক আশরাফ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্নার স্বাক্ষর রয়েছে। বিবৃতি তারা ৬ দফা দাবি জানানো হয়, অবিলম্বে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে; আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে; হলে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং মামলার নামে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ হয়রানির শিকার যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাকসু সচল করতে হবে। বিবৃতি উল্লেখ করা হয়, গত ১১ মার্চ বগুড়া থেকে আগত মোহাম্¥দ পরিবহনের বাস সহকারীর সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশের বাকবিতন্ডা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুরে ফটকে বাস পৌছালে সেখানে ওই বাস সহকারী ও আল-আমিন আকাশের বন্ধুদের হাতাহাতি হয়। সেখানে বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ী আকাশের বন্ধুদের উপর মারমুখী হলে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হয়। পরে সেখানে কিবরিয়ার নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ (রামদা, চাপাতি, রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প) বিনোদপুর ফটকে এসে জড়ো হতে থাকে।

বিবৃতি আরও উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগ কর্মীদের এই সংঘর্ষ সাধারণ ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ’ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। অপরদিকে বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ীর সাথে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পুলিশ বক্সে আগুন দিলে আশেপাশের কিছু দোকানেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টায় উপাচার্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির সমাধান না করেই ফিরে আসেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও এলোপাথারি গুলি চালায় পুলিশ। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

এ ঘটনায় চূড়ান্তভাবে দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ও নির্লিপ্ত অবস্থান। বিবৃতি জানানো হয়, ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগতদের দ্বারা আক্রান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। যার ফলে ১২ মার্চ শিক্ষার্থীরা একত্রে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অবরুদ্ধ উপাচার্য কোন সমাধান না দিয়ে তার বাসভবনে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুনরায় সহিংস করে তোলার চেষ্টায় মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জান্নাত জানা। তার নেতৃত্বে রেল লাইনের উপর ডামি পুড়িয়ে চারুকলার রেলগেট অবরোধ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আলাদা আলাদাভাবে তিনটি মামলা করেছে। এঘটনায় এখনো পর্যন্ত স্থানীয় ব্যবসায়ী, মেসমালিক ও জনগণের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।