শুক্রবার , ৫ জুলাই ২০২৪ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদিতে নিহত নওগাঁর ৩ প্রবাসীর মরদেহ দেশে আনতে সহযোগিতা চান স্বজনরা

Paris
জুলাই ৫, ২০২৪ ১০:১৮ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি :
সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রয়েছেন তিনজন। বুধবার (৩ জুলাই) সৌদির
স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনের এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন  নিহতদের স্বজনরা।
নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন। নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০),শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন (২৫) ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান
(৪০)।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়,গ্রামের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা ভিড় করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেননা। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন।
ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টেসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে  জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুৎ হোসেন বলেন,তার  শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন  পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি। শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামীম হোসেন প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে  শাশুড়ি ,শ্যালকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শশুর  শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।
শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান,এনামুল গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ঘর বাঁধতে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মান করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার  ভাগ্যে সইলো না । বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে গেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা।
সৌদি আরবে আগুনে পুরে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘একজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। বাকি দুইজনেরও তথ্য পেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। সেখান থেকে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে কাগজ পেলে নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।’

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর