সৌদিতে নিহত বাগমারার রুবেলের ছয়মাস আগে মোবাইলে বিয়ে, সাক্ষাৎ হয়নি বউয়ের সঙ্গে


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছয়মাস আগে মোবাইলে বিয়ে করেছিলেন রুবেল হোসাইন শেখ। বিয়ের পরে এখনো সাক্ষাত হয়নি বউয়ের সঙ্গে। কয়েক মাস পরে দেশে ফিরে এসে বউকে আনুষ্ঠানিকবাবে বাড়িতে তোলার কথা ছিল। কিন্তু সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ডে নিহত রুবেলকে এখন লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে। গতকাল শুক্রবার সৌদি সময় বিকেল চারটায় রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকার এক সোফা তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত রুবেল হোসেনের বাবা জফির উদ্দিন ছেলেকে হারিয়ে নিস্তব্ধ প্রায়। এই দুর্ঘটনা মানতেই পারছেন না তিনি।  তিনি  বলেন, গতকাল শুক্রবারই তাঁরা মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন। তবে নিশ্চিত হতে পারেননি। আজ সকালে সেখানে থেকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রুবেলরা দুই ভাই এক বোন। বৃদ্ধ বাবা রুবেলের পাঠানো টাকায় সংসার চালাতেন।

সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নয়জনের মধ্যে চারজনেরই বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। এর মধ্যে তিনজনের বাড়ি ঝিকড়া ইউনিয়নে। অন্যজনের যোগিপাড়া ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন বারইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিন শেখের ছেলে রুবেল হোসাইন শেখ (২৬), একই গ্রামের শাহাদতের হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম রুবেল আলী (২৭) ও একই গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে সাজেদুল ইসলাম (৪৫) ও বড়মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার (৩৮)। তাঁদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

সাজেদুল ইসলাম আট বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি সৌদি আরবে যান। তিনিও মারা গেছেন। রুবেল ও সাজেদুল একসঙ্গে থাকতেন। সাজেদুলের এক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী রিপা বেগম পাগলপ্রায়। এখন কিভাবে সংসার চালাবেন, সেটিও চোখে-মুখে স্পষ্টই ছাপ দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে।

রুবেল ও সাজেদুলের সহযোগিতায় একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন একই গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম রুবেল আলী (২৭)। সাত মাস আগে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনিও আগুনে পুড়ে লাশ হলেন। কৃষক শাহাদতের ছেলে রুবেলকে হারিয়ে বাবা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন। রুবেলের এক বোন রয়েছে।

উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার (৩৯) ছয় বছর আগে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে।

বাবা আনিছার রহমান বলেন, ছেলে কিছু টাকা জমিয়ে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেই টাকা ধিরে ধিরে শোধ করেছেন। এখন সুদিন আসছিল। কিন্তু তার আগেই সব ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে। ফিরোজ শুক্রবার একটি কম্পানী থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটা ওই কারখানায় যোগ দিয়েছিলেন। এটি ছিল তার নতুন চাকরি। কিন্তু যেদিন যোগ দেন, সেদিনই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ছেলেটি খুবই ভদ্র ছিল। মাত্র দুই বছর আগে গিয়ে সেখানে ওই কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। তাঁর এক শিশু ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

স/আর