সেহরি-তারাবিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চ্যালেঞ্জের

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

রমজানে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে প্রতি বছরই বাড়তি চাপে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ। কারণ রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে লোডশেডিং থাকলে মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগেরও লক্ষ্য থাকে এ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার। তবে সারাদেশে একই সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, হয়তো লোডম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার রমজানে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের এ চাহিদা থাকবে। এ চাহিদা পূরণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাহিদা ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা ন্যূনতম এক হাজার ৫৪০ মিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে।

তবে সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহের নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়াও ফার্নেস অয়েলের চাহিদা এক লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন এবং ডিজেলের চাহিদা ১৫ হাজার ৬০০ টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম দুই মাসের উৎপাদনক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা এবং বিপিসির সঙ্গে সম্ভাব্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য বৈঠকও করেছে মন্ত্রণালয়। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় যাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনে চালাতে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল থেকেই রোজা শুরু হবে। এরই মধ্যে গরম বাড়ছে। পাশাপাশি চলছে সেচ মৌসুম। সাধারণত এ সময়টাতে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। আর দিন যত যাবে চাহিদা বাড়তেই থাকবে। এ অবস্থায় রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানোর পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বিষয়টি নিয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেছেন, রমজানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে সঞ্চালন, বিতরণ বা ট্রান্সমিশন সীমাবদ্ধতা ও কারিগরি ত্রুটির কারণে কোথাও কোথাও সাময়িক লোডশেডিং হতে পারে। এবার সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ফার্নেসঅয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো হবে। জ্বালানি সরবরাহের স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও লোডশেডিং যাতে না হয়, বিশেষ করে ইফতার, তারাবি ও সেহররি সময় যাতে বিদ্যুৎ থাকে সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে পিডিবির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও ময়মনসিংহে লোডশেডিং হচ্ছে। এজন্য সঞ্চালন ও বিতরণ সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি সংকট, ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনী জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে প্রতিবন্ধকতাসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন তৈরি না হওয়ায় লোডশেডিং করেই এ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। সেটাও এলাকা ভিত্তিক নির্দিষ্ট সময় ধরে করা হবে।

বর্তমানে দেশের বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের, ফার্নেস অয়েলনির্ভর ছয় হাজার ১৯১ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক চার হাজার ৪১১ মেগাওয়াট, ডিজেলে ৮২২ মেগাওয়াট, নবায়নযোগ্য ৬৮৯ মেগাওয়াট এবং আমদানি করা হয় দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট।

এদিকে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় থেকে বিতরণ কোম্পানি ও সংশ্লিষ্টদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে মনিটরিং করার জন্য নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ব্যবহৃত ফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর এবং হটলাইন নম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা।