বিশেষ ধারে সংকট কাটিয়ে উদ্বৃত্তে ৫ ইসলামী ব্যাংক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে ২০২৩ সালের শেষ কার্যদিবসে তারল্য সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামীসহ মোট ৭টি বেসরকারি ব্যাংককে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাতেই গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংকট থেকে উদ্বৃত্ত তারল্যে ফিরেছিল ৫ ইসলামী ব্যাংক। এ

র প্রভাবে পুরো ইসলামী ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্বৃত্ত তারল্যে বড় উল্লস্ফন ঘটে, যেখানে তার আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত তারল্য নিম্নমুখী ছিল। ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। জানা যায়, ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে (এলএলআর) কোনো জামানত ছাড়াই গত বছরের শেষ কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের এই বিশেষ ধারের সুবিধা দিয়েছিল। এই সেই ৫ পাঁচ ব্যাংক, যাদের ২০২২ সালেও একই পন্থায় বড় অঙ্কের অর্থ ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৩ সালে এই ৫ ব্যাংকের বাইরে আরও দুটি ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধার পায়। এগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর ৩৬(১) ধারা অনুযায়ী আমানতকারীদের সুরক্ষায় প্রতিটি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলতি ধারার ব্যাংকের জন্য এ হার ১৭ শতাংশ। আর শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর হিসেবে ৪ শতাংশ নগদে রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি সিআরআর রাখতে না পারে তা হলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ৯ শতাংশ হারে দ- সুদ দিতে হয়। আর এসএলআর রাখতে ব্যর্থ অংশের ওপর ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ হয়। কোনো ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ৪২ দিন ব্যর্থ হলে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ৩৬(৫)(এ) অনুযায়ী প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করতে হবে। এর পরও বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ৩৬(৫)(বি) অনুযায়ী নতুন আমানত নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার নেওয়া ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকটি অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছিল না। এসএলআরের জন্য এসব ব্যাংকের কাছে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল তা বন্ধক রেখে ধার করা টাকা খরচ করে ফেলেছিল। নতুন করে ধার নেওয়ার কোনো উপায় উপকরণ ছিল না। কেবল আগে নেওয়া ধারের মেয়াদ বাড়াচ্ছিল।

এর মধ্যেই শরিয়াহভিত্তিক ৫ ইসলামী ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল। তাই বছরের শেষ কার্যদিবসে বিশেষ ধার দিয়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। ফলে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ বাড়ে প্রায় ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। অথচ গত জুন প্রান্তিকের তুলনায় সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে উল্টো উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছিল প্রায় ৯২৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রায় ৬৫৮ কোটি টাকার তারল্য ঘাটতি ছিল। বিশেষ সুবিধা নেওয়ার সুবাদে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য ১১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। একই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। অথচ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় দেড়শ কোটি টাকার মতো, যেখানে আগের প্রান্তিকে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ইউনিয়ন ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৮৩ কোটি টাকা। তবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকার মতো। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, যেখানে আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৪৬৫ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ২৬০০ কোটি টাকার মতো, আগের প্রান্তিকেও ব্যাংকটির আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেড়ে দেড়শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ ছাড়া আলোচ্য প্রান্তিক শেষে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য আগের মতোই ৭০৫ কোটি টাকায় অপরিবর্তি ছিল।