সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি :
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চিরি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ৭ বছরেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্র/ছাত্রী সহ দুই পাড়ের কয়েক হাজার মানুষকে। অপরদিকে চলতি বছরে চিরি নদী খননের পর বৃষ্টি ও জোয়ারে পানি আসায় সেতুটির বটম স্লাভের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সুরুঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে । এর ফলে সেতুটি ডেবে গেছে এবং উপরের রেলিং ও পিলারে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে যে কোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশংকা প্রকাশ করেছে।

উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের আরজি অনন্তপুর ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ভানাই কুশলিয়া গ্রামের মধ্যবর্তী চিরি নদীর ওপর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। যার ব্যয় ছিল প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা। ৪০ফুট দৈর্ঘ্য এ সেতুর পশ্চিম পাশে কিছুটা থাকলেও পুর্ব পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক।

আরজি অনন্তপুর গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, অনেক বছর ধরে একটি ব্রীজের অভাবে আমরা দুই গ্রামের বাসিন্দারা দুর্ভোগে ছিলাম। ৭ বছর আগে যখন ব্রীজটি হলো, তখন আমরা সবাই আশা করেছিলাম এবার হয়তো আমাদের কষ্ট লাঘব হবে। কিন্তুু ব্রীজটি নির্মাণের ৭ বছর পার হয়ে গেলেও দুপারে কোন রাস্তা করা হয়নি। দুই পারের চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিকট ব্রীজের রাস্তার জন্য ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি । আমাদের কষ্ট কষ্টই থেকে গেল।

ভানাইকুশলিয়া গ্রামের ভ্যান চালক ফজর আলী বলেন, এখানে ব্রীজ হলেও রাস্তা না হওয়ায় ভ্যান নিয়ে এপার ওপার যাওয়া যায় না। ৭ বছর ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে ব্রীজটি। জনগনের কোন কাজেই লাগেনি। তিনি আরো বলেন, নদীতে বর্ষার পানি আসায় ব্রীজের নিচে সুরঙ্গ হয়ে পানি যাওয়ার কারনে ব্রীজটির পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে যে কোন সময় ব্রীজটি ভেঙ্গে যেতে পারে।

একই এলাকার রোকসানা খাতুন বলেন, এখানে যখন ব্রীজ ছিল না তখন আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারতো না। দুই গ্রামের লোক কোন পাড়ে যেতে পারতাম না। ব্রীজটি হওয়ার পর খুব আশায় ছিলাম আমরা দুই গ্রামের মানুষ এপার ওপার যাবো, আমাদের ছেলে মেয়েরা ব্রীজের উপর দিয়ে স্কুল কলেজে যাবে। কিন্তু ৭ বছর যাবৎ ব্রীজের দুপাশে রাস্তা না করায় সেই আগের কষ্টই থাকলো। বরং ব্রীজ হয়ে আমাদের দূর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে।

উপজেলার মালিদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিয়াম বলেন, ব্রীজটি হওয়ার আগে আমরা নদীতে কলার ভেলায় করে ওপারে স্কুলে যেতাম। এতে অনেক সময় নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে শরীরের পোশাক ও বই খাতা ভিজে যেত। আমরা স্কুলে যেতে পারতাম না। পরীক্ষার সময় নদীতে পানি বেশি থাকার কারণে ২/৩ কিঃমিঃ রাস্তা ঘুরে স্কুলে যেতে হতো। সময় মত স্কুলে পৌছাতে না পারার কারণে পরীক্ষা মিস হতো। এর ব্রীজটি করে দেওয়াতে আমরা খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তুু দুই পাশে রাস্তা করে না দেওয়ায় আরো কষ্ট বেশি হয়েছে।

আয়মারসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামনুর রশিদ মিল্টন বলেন, আমি যতটুকু জানি আরজি অনন্তপুর-ভানাইকুশলিয়া সংযোগ রাস্তর চিরি নদীর উপর দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে একটি সেতু নির্মান করা হয়। কিন্তুু সংযোগ রাস্তা না থাকায় জনগণের চলাচলের দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি চিরি নদী খনন করার করার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মুন্নার সাথে আলোচনা ও তার পরামর্শে রাস্তায় মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তবে বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি সেতুটির স্লাবে নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়াই সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে যেতে পারে। এতে উভয় পাড়ের জনগণের সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবে। সেতুটি রক্ষনা বেক্ষনের জন্য তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেফাউল আজম বলেন, সেতুর ৫০ ফিট দুরুত্ব থেকে খাল খননের নিয়ম থাকলেও নদী খননকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাটি খননের সময় সেই নিয়ম মানেননি। এতে করে বটম স্লাভের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ঝুকির মূখে পড়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কৃর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতই তাদের সঙ্গে কথা বলে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রীজের সংযোগ রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সংযোগ রাস্তা পরে আগে ব্রীজ রক্ষা হোক। পরে দুই পারের মানুষের যাতায়াতের বিষয় বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান্যানের সঙ্গে কথা বলে যদি সরকারী রাস্তা থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা সংস্কারের মাধ্যমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মন্ডল মুন্না বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান্যান সাহেবের তথ্যে সরেজমিনে গিয়ে মাটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে জনসাধারণের চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান কে ব্রীজটি দেখে সেখানে কি ধরনের ব্যবস্থা নিলে ব্রীজটি রক্ষা করা যাবে তা জানালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।