সু চিকে আর বিশ্বাস করছে না যুক্তরাষ্ট্র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকেও আর পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য সংগ্রহকারী রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাজা নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত নয়। সু চির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান ‘গণহত্যা’ কি না, সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাজার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ভিয়েতনামে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক অনুষ্ঠানে সু চি বলেন, সাংবাদিকতা বা মতপ্রকাশের অপরাধে তাঁদের সাজা হয়নি। তাঁরা মিয়ানমারের গোপনীয়তা আইন ভেঙেছেন বলেই সাজা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি এক টুইট বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর নিপীড়ন চালানোর কথা প্রথমে অস্বীকার করা হয়েছে। আর এখন জাতিগত নির্মূল অভিযান নিয়ে প্রতিবেদন লেখা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাজা দেওয়াকে যৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে। অবিশ্বাস্য!’

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জোরালো অভিযোগের মধ্যেও সু চিকে ঘিরে ওই দেশটিতে আশার আলো দেখে আসছে। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ওই ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের বড় অংশজুড়েই ছিল সু চির মন্তব্য। সাংবাদিকরা এ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্টকে। একপর্যায়ে হিদার নোয়ার্ট বলেন, সু চি যেসব মন্তব্য করেছেন সেগুলোর অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত নয়। মিয়ানমারে মার্কিন দূতাবাস ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিচারপ্রক্রিয়া ও সাজা দেওয়ার ঘটনা পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। হিদার নোয়ার্ট আরো বলেন, ওই রায়ে মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুই সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিপীড়ন ও সম্ভাব্য গণহত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কাজ শেষ হয়েছে কি না জানতে চাইলে হিদার নোয়ার্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অপরাধের বিষয়ে আইনিভাবে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জটিল ও কিছুটা সময়সাপেক্ষ কাজ। কারণ এ ক্ষেত্রে সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কি না, তাও ঠিক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনের অংশবিশেষের ভিত্তিতে গত মাসে ওই দেশটির পলিটিকো জার্নালে বলা হয়েছিল, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সত্ত্ব্বেও রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা আখ্যা দেওয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে যুক্তরাষ্ট্রকে এটি মোকাবেলায় সামরিকসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যাবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করেছে। বর্তমান বাস্তবতায় চীনের কৌশলগত মিত্র মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র এমনটি করতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।