সুস্থতায় ফিজিওথেরাপি

সেলিনা জাহান সোনিয়া। ফাইল ছবি

সেলিনা জাহান সোনিয়া: 

ফিজিওথেরাপি কী?

ফিজিওথেরাপি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিশেষায়িত শাখা। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অপরিসীম। ‘ফিজিও’ অর্থ শারীরিক ও ‘থেরাপি’ অর্থ চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপির শাব্দিক অর্থ ‘শারীরিক চিকিৎসা’। ফিজিওথেরাপিতে প্রধানত বিভিন্ন বাহ্যিক চিকিৎসা যেমন তাপ , আলো, বিদ্যুত, অস্থিসন্ধির সঞ্চালন, সফট টিস্যু (স্নায়ু , মাংসপেশি, লিগামেন্ট) সঞ্চালন, ব্যায়াম ইত্যাদি চিকিৎসা ব্যবহার করা হয়। ফিজিওথেরাপি একটি ক্রমবর্ধমান, বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সংযোজন হচ্ছে এবং এই বিশেষায়িত শাখাকে সমৃদ্ধ করছে।

ফিজিওথেরাপি কেবলমাত্র রোগের উপসর্গগুলকেই উপশম করে না, পাশাপাশি রোগের উৎসেও কাজ করে যেন সমস্যা তার উৎপত্তি স্থান থেকে দূর হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ-উপসর্গের প্রতিকার ও পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকেন।

যেসব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন?
মাংশপেশি-অস্থি-অস্থিসন্ধির সমস্যা যেমন ঘাড়, কোমর, পিঠ ব্যাথা, অস্থিসন্ধির প্রদাহ, ক্ষয়জনিত ব্যাথা ইত্যাদি । মস্তিস্ক, স্নায়ু সমস্যা যেমন স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া, পারকিনসন, জিবিএস ইত্যাদি। জন্মগত ও বিকাশজনিত ব্যাধি যেমন সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিন্ড্রম ইত্যাদি। বিভিন্ন রকমের আঘাত ও অপারেশন পরবর্তী পুনর্বাসন।

এছাড়া খেলাধুলা জনিত আঘাত, হৃদরোগ-ফুসফুস জনিত সমস্যা, বার্ধক্য জনিত সমস্যা, স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতি জনিত সমস্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কার কাছ থেকে নিবেন?
ফিজিওথেরাপি একটি পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফিজিওথেরাপির ফলাফল নির্ভর করে সঠিক চিকিৎসা নির্বাচন ও তার কার্যকর বাস্তবায়নের উপর। এই প্রক্রিয়া সম্পাদনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় জ্ঞ্যান, দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি (প্রফেশনাল ডিগ্রী) অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটশন এ্যাক্ট অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদানের জন্য ৫ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ইন ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) ডিগ্রী অর্জন করা অত্যাবশ্যক। বিপিটি ডিগ্রীধারী ফিজিওথেরাপিস্টগন প্রয়োজনীয় নিরীক্ষণ সাপেক্ষে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ ও প্রদানে পারদর্শী হয়ে থাকেন। বিপিটি ডিগ্রীধারী ফিজিওথেরাপিস্টগন স্বতন্ত্র পেশাজীবি হিসেবে গণ্য হন এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সরাসরি চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন।

ফিজিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: 
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি। সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একারনে একজন স্বীকৃত ও দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে ফিজিওথেরাপির গ্রহন করা বাঞ্ছনীয়।

ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রাপ্যতা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার প্রাপ্যতা খুবই অপ্রতুল। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম ১৯৭২ সালে সুচনা হলেও পরবর্তীতে তা ব্যাহত হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ফিজিওথেরাপির শিক্ষাকার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় ৮টি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ইন ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) চালু আছে। চাহিদার তুলনায় ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা নগন্য। বিভাগীয় পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি সেবা তুলনামুলক সহজলভ্য হলেও জেলা পর্যায়ে সহজলভ্য নয়। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীরা এখনো ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার সুবিধা বঞ্চিত। সরকারী স্বাস্থ্যসেবায় ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার প্রাপ্যতা খুবই সীমিত এবং শুধুমাত্র বিশেষায়িত প্রতিস্থানে উপলব্ধ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ও কার্যকর ফিজিওথেরাপির জন্য অবশ্যই একজন বিপিটি ডিগ্রীপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিবেন।

লেখক:  সদস্য, রাজশাহী ফিজিওথেরাপি পেশাজীবি পরিষদ ও ডেপুটি চিফ ফিজিওথেরাপিস্ট, ফিজিও পয়েন্ট এবং অতিথি শিক্ষক , আইএইচটি- রাজশাহী। 

এএইচ/এস