সুবিধা না পেয়ে সোনামসজিদ বন্দরে পণ্য আমদানিতে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী অঞ্চলে এবছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬৬ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে গত ৪ মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি টাকা। এই হারে রাজস্ব আদায় হতে থাকলে আগামী জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় গিয়ে দাঁড়াবে সর্বমোট ২৭২ কোটি টাকা। আর বাকি আট মাসের রাজস্ব আদায় হবে ২০৪ কোটি টাকা। ফলে এ বছর রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এর পেছনে বড় কারণ হলো সোনা মসজিদ বন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে যাওয়া।

সূত্র মতে, রাজশাহী কাস্টমস এক্সারসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্মকর্তার আওতায় এ অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত হলো সোনা মসজিদ বন্দর। কিন্তু সোনা মসিজদ বন্দরের আমদানি কারকরা সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি পণ্যে তাঁরা অতিরিক্ত সুবিধা না পেয়ে আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। এর বাইরে পানামা পোর্ট লিং কোম্পানীর উচ্চ হারে ফি আদায়ের কারণেও আমদানি কারকরা আমদানিতে ব্যাপক হারে আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে চলতি অর্থ বছরে এবার রাজস্ব আদায়ে নেমেছে ধস।

সূত্র মতে, গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সেই বছর ভ্যাট আদায় হয়েছিলো এক হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ বছর সেখানে লক্ষ্যামাত্র নির্ধারণ করা হয় দুই হাজার ৯৮ কোটি টাকা। কিন্তু গত চার মাসে (জুন-অক্টোবর) পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে বাকি আট মাসে আরো প্রায় ৮০০ কোটি বা এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিক থেকে ততটা আশঙ্কার কিছু নাই। যতটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে। কারণ এ বছর এখন পর্যন্ত যে রাজস্ব আদায় হয়েছে, সেটি খুবই নগন্য। এইভাবে চলতে থাকলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও ভ্যাট আদায় হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, গত বছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছি ৩৫৪ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছর ৫৬৬ কোটির লক্ষ্যামাত্রার বিপরীতে গত চার মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি টাকা। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় একেবারে নগন্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এভাবে চলতে থাকলে এ বছর ভ্যাট আদায়ে ব্যাপক ধস নামবে।

একাধিক আমদানি কারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার একটি অংশ অলিখিতভাবে ছাড় দেয়া হচ্ছিল কাস্টমস থেকে। এ কারণে আমদানি কারকরা একটি ট্রাকে বাড়ি সুবিধা নিয়ে অতিরিক্ত পণ্য আমদানির সুযোগ পেতেন। কিন্তু বর্তমান কমিশনার লুৎফর রহমান আসার পরে কাস্টমস নীতির বাইরে গিয়ে কোনো সুবিধা আমদানি কারকদের দিতে অস্বীকার করেন। ফলে আমদানি কারকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন সোনা মসজিদ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে।

আরেক জন আমদানি কারক বলেন, ‘প্রতিটি ট্রাকের ঘোষণা অনুযায়ী মালামাল আনা হলে সেটি পূরণ হবে না। কারণ অনেক মালামাল পচে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই কিছু মালামাল ঘোষণার চেয়ে অতিরিক্ত আমদানি করা হচ্ছিল বাড়তি সুবিধা নিয়ে।কিন্তু এখন সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানিতেও আগ্রহ হারাচ্ছেন তাঁরা।’
এদিকে সোনা মসজিদ বন্দরের বেসরকারি প্রতিশষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক কোম্পানীও ট্রাকপ্রতি ফি বৃদ্ধি করায় আমদানি কারকরা পণ্য আমাদানিতে আগ্রহ হারিয়েছেন বলেও দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

এসব নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী কাস্টমস এক্সারসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট’র কমিশনার লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভ্যাট দিবসকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো ভ্যাট ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে। আশা করি মানুষের মাঝে এসব কর্মসূচি সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজে দিবে। তবে বন্দরে কেন পণ্য আমদানি কমে গেলো এটি আমদানি কারকরা যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করবেন, সেটিই ছাড় করা হবে। কিন্তু তাঁরা কেন পণ্য আমদানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন সেটি তাদেরই ব্যাপার। আমরা নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করতে পারি না। সে ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় কোন পর্যায়ে যাবে সেটি নিয়েও কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’