সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত প্যানেলের সংঘাতের জেরে অর্থ সঙ্কটে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত প্যানেলের সংঘাত এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বোর্ডের ৮৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

 

তবে এর ফলে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের চলতি সিরিজ সঙ্কটের মুখে পড়বে, এই যুক্তিতে বোর্ড প্রতিবাদ জানানোর পর মঙ্গলবার তাদের ম্যাচ আয়োজনের খরচখরচা করার অনুমতি দিয়েছে বিচারপতি লোধার নেতৃত্বাধীন কমিটি।

 

আগামী ৬ই অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সংস্কার নিয়ে একটা হেস্তনেস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার আগে এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে ভারতীয় বোর্ড ও বিচারপতি লোধা কমিটি – দু’পক্ষর কেউই অন্যকে এতটুকু ছাড় দিতে রাজি নয়।

 

সোমবার বিকেলে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টেও হারিয়ে ভারত যখন টেস্টে আবার বিশ্বে এক নম্বর দলের শিরোপা ফিরে পাচ্ছে, তার খানিকক্ষণ আগেই ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আর এম লোধা ভারতের দুটি ব্যাঙ্ক – ইয়েস ব্যাঙ্ক ও মহারাষ্ট্র ব্যাঙ্কে ইমেইল করে নির্দেশ দেন বিসিসিআইয়ের অ্যাকাউন্টে যেন কোনও বড় লেনদেন না-হয়।

 

এই দুটি ব্যাঙ্কে ভারতীয় বোর্ডের অ্যাকাউন্টে প্রায় ১২০০ কোটি রুপি আছে বলে ধারণা করা হয়, সেই তহবিল কার্যত হাতছাড়া হতে বসায় মাথায় হাত পড়ে ভারতীয় বোর্ডের।

 

এর পরই পাল্টা আক্রমণের পথে যান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর।

_91515156_dd3c7c76-d913-4497-aeaf-a74ea535f02f

তিনি বলেন, “প্রতি টেস্ট ম্যাচ পিছু আমরা খেলোয়াড়দের ফি সাত লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা করেছি – কারণ বোর্ড টেস্ট ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিতে চাইছি। কিন্তু লোধা কমিটি যেভাবে বলছে যে ভবিষ্যতে আমরা কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারব না, তাতে আমরা খেলোয়াড়দের পেমেন্ট কীভাবে দেব সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”

 

অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজের বাকি একটি টেস্ট ও পাঁচটি ওয়ান-ডে ম্যাচ আয়োজন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, বোর্ড সেটাও বুঝিয়ে দেয়।

 

কিন্তু বোর্ডের এই প্রতিক্রিয়ায় অসম্ভব ক্ষুব্ধ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত প্যানেলের প্রধান, জাস্টিস আর এম লোধা এদিন জানিয়ে দেন তিনি বড় অঙ্কের লেনদেন শুধু বন্ধ রাখতে বলেছিলেন – ম্যাচ আয়োজনের জন্য রুটিন খরচখরচায় মোটেও আপত্তি জানাননি।

 

তিনি মঙ্গলবার বলেন, “কোনও ম্যাচ বা সিরিজ বাতিল করার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা গতকাল যে ইমেইল পাঠিয়েছিলাম তাতে শুধু এটুকুই বলা ছিল বোর্ড রাজ্য সংস্থাগুলোকে কোনও মোটা অঙ্কের টাকা বিলি করতে পারবে না।”

 

“দৈনন্দিন ব্যয়, খেলা আয়োজন বা ক্রিকেট-সংক্রান্ত খরচখরচায় কিন্তু কোনও রাশ টানা হয়। আমি তো বলব আমাদের ইমেইলকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এমন বক্তব্যের ভিত্তিতে, যে কথা আমরা বলিইনি”, বলেন জাস্টিস লোধা।

 

আসলে জাস্টিস লোধার প্যানেল ভারতীয় বোর্ডে আমূল সংস্কারের যে সব প্রস্তাব করেছে বোর্ড তা মানতে একেবারেই রাজি নয় বলে এই সংঘাতের সূচনা।

 

সেই প্রস্তাব অনুযায়ী বোর্ডের বর্তমান নেতৃত্বর প্রায় সবাইকে ক্রিকেট প্রশাসন থেকে অচিরে বিদায় নিতে হবে, যার প্রতিবাদে অনুরাগ ঠাকুর ও তার সতীর্থরা শেষ দেখে ছাড়বেন বলে স্থির করেছেন।

 

অন্যদিকে লোধা প্যানেলের আশঙ্কা ছিল, ৬ই অক্টোবর চূড়ান্ত শুনানির আগেই রাজ্য সংস্থাগুলিকে সাহায্য করার নামে বোর্ড তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২০০ কোটি রুপির সিংহভাগ সরিয়ে ফেলতে চাইছে – আর তাই সোমবার তারা সেই ইমেইল পাঠান।

 

বোর্ড ওদিকে একনাগাড়ে বলে চলেছে লোধা কমিটির প্রায় সব দাবিই অবাস্তব। অনুরাগ ঠাকুর যেমন বলছেন, ভারত আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে কি না সেটাও নিশ্চিত নয় – কারণ লোধা কমিটি বলেছে সব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে অন্তত ১৫ দিন বিরতি থাকতে হবে।

 

“যার অর্থ হল হয় আমাদের হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাদ দিতে হবে, কিংবা আইপিএল বন্ধ করতে হবে। তাদের সব প্রস্তাবই আসলে ক্রিকেটে সরাসরি প্রভাব ফেলছে”, বলছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট।

 

এখন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টেই ফয়সালা হবে – এই বিতর্কে তারা নিজেদের নিয়োগ করা কমিটির পাশে দাঁড়াবেন, না কি বোর্ডের পাল্টা যুক্তিকে আমল দেবেন।

 

শীর্ষ আদালতের সেই সিদ্ধান্তের আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড এই মুহূর্তে যে তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা