সীমান্তে পাকিস্তানের আর্টিলারি হামলায় ১৫ আফগান নিহত, আহত ৮০

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। এরই মধ্যে কান্দাহারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি হামলায় ১৫ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮০ জন। ঘটনাটি গত ৩০ জুলাইয়ের। তবে এর জেরে সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা চলছে দুই দেশের মধ্যে।

৩১ জুলাই কান্দাহার গভর্নরের মুখপাত্র বাহির আহমাদী বলেছিলেন যে, স্পিন বোলদাক সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ৮০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

হামলার পরে, আফগান সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল ইয়াসিন জিয়া আর্টিলারি ২০৫, সেলেব ২০১২ এবং থান্ডার ২০৩ সহ সমস্ত সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ডুরান্ড লাইনে অবস্থানরত আফগান সেনাদের অস্ত্র সজ্জিত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, এমনিতে দুই দেশের মধ্যে চমন-স্পিন বোলদাক সীমান্ত বন্ধই থাকে। কিন্তু ইদুল আজহা উপলক্ষে ৩০ জুলাই এই সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বন্ধ সীমান্তের দুইপাশের পাকিস্তানি ও আফগানরা সীমান্ত পার হয়ে এই উৎসবে পরিবারবর্গের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। সেইসময় দু’পক্ষের বাহিনীর মধ্যে তুচ্ছ কারণে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এরপর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আফগানস্তানের মাটিতে গোলাবর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এদিনই এর কড়া বিবৃতি দিয়েছিল। বলেছিল, পাক সেনাবাহিনী আফগান ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালানো বন্ধ না করলে আফগান সেনাবাহিনীও তার প্রতিশোধ নেবে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও এই সংঘর্ষ নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তাতে সুদৃঢ় ও সদর্থক সমাধান বের হবে বলে আশা করছেন তারা।

জানা গেছে, একেবারে স্পিন বোলডা-এর আবাসিক এলাকাতেই হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এতে প্রথমে নয়জন নিহত এবং বিপুল আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। পরে ২৪ ঘণ্টার তথ্যে ১৫ জন নিহত এবং আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন।

এদিকে, হামলায় আহত কয়েক ডজন আফগানকে কান্দাহার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু এবং আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, এই হামলায় এক পরিবারের সাতজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং পরিবারের এক শিশু আহত হয়েছেন। তারা কান্দাহার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আক্রমণটি এমনভাবে শুরু হয়েছিল যে এটি সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ছিল।

এর আগে কোভিড-১৯ মাহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সীমান্তের দুই দিকে দুই দেশেরই সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে একসময় আফগান পক্ষের জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিল। সেই সময়ই একদফা ঝামেলা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে। এরপরই আচমকা পাকিস্তানের দিক থেকে ছু়টে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গোলা। এর রেশ কাটেনি এখনও। তীব্র উত্তেজনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রশক্তি হলেও দুই দেশের মধ্যে মোটেই বনিবনা নেই। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই আফগানিস্তান অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনী গোপনে তালেবান জঙ্গিদের সমর্থন করে। তবে পাকিস্তান বারবারই তা অস্বীকার করেছে। এবং উল্টো আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পাক সরকারবিরোধী জঙ্গিদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ