সিসি টিভির আওতার মধ্যেই চলছে মোটর সাইকেল চুরির হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর
নাটোরের সিংড়ায় যেন মোটর সাইকেল চুরির হিড়িক পড়েছে। দিনে দুপুরে হরহামেশেই চুরি হয়ে যাচ্ছে মোটরসাইকেল। দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরও বাদ যাচ্ছে মোটরসাইকেল চুরি থেকে।

তবে সিংড়া পৌর এলাকায় সিসি টিভি থাকার পরও মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে মোটরসাইকেল মালিকদের মধ্যে। তাছাড়া মোটরসাইকেল চুরির পর সংশ্লিষ্ট থানায় ভুক্তভোগিরা জিডি বা মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া কোন মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

তবে পুলিশ বলছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেই মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট এই কাজগুলো করছে। যার কারনে সহজেই মোটরসাইকেল চোরদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (২৯ মে) দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে সিসি ক্যামেরা বেষ্টিত সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই অফিসেই কর্মরত টেকনিশিয়ান রফিকুল ইসলামের ১২৫সি সি বাজাজ ডিসকোভার লাল-কালো রংয়ের একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। তাৎক্ষনিক তিনি সিংড়া থানায় একটি জিডি (নং ১২৮৬) করেন এবং পরে মঙ্গলবার বিকেলে একটি এজাহার দাখিল করেন।

এছাড়া সম্প্রতি ওই একই স্থান থেকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের ১৩৫ সিসি ডিসকোভার, পাটকোল গ্রামের রওশন আলী ১০০ সিসি ডিসকোভার, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম স্বপনের ৮০ সিসি, জামতলী এলাকা থেকে উপজেলা পরিষদের নিজ নামীয় ১৫০সিসি পালসার, আ’লীগের বর্ধিত সভায় মিলন হোসেনের ১৫০ সিসি পালসার, বালুয়া বাসুয়া জামে মসজিদ, কেন্দ্রিয় মসজিদ ও দমদমা মাদ্রাসায় নামাজরত অবস্থায় ৩টি মোটর সাইকেলসহ উপজেলা কার্যালয় থেকে আরো প্রায় ১০টি মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে সিংড়া থানায় একাধিক জিডি ও মামলা করা হলেও একটিও উদ্ধার বা কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এছাড়া রাতের আধাঁরে বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে প্রায় মোটর সাইকেল চুরি ঘটনা ঘটছে। তারপরও নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ।
সূত্র আরো জানায়, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষরা উপজেলায় বিভিন্ন কাজে আসেন। মোটরসাইকেল রেখে কাজ সেড়ে এসে দেখছেন মোটরসাইকেল নেই। আবার সন্ধ্যায় মসজিদে নামাজ-ইফতার করা অবস্থায় মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মোটরসাইকেল চুরির প্রবনতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে গাড়ী মালিকদের মধ্যে।
জানা যায়, সিংড়া উপজেলার পৌর এলাকার আইন-শৃঙখলা স্বাভাবিক রাখতে অন্তত ১৪টি সিসি টিভি বসানো হয়েছে। গত বছর এই সিসি টিভির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পুরো সিসি টিভি নিয়ন্ত্রণ করছে সিংড়া থানা পুলিশ। কিন্তু তারপরও মোটরসাইকেল চোরদের সনাক্ত করতে পারছেনা পুলিশ। আর চোররা সনাক্ত না হওয়ায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দিন দিন বেড়েই চলছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।
ইউএনও অফিসের টেকনিশিয়ান রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি চুরির বিষয়ে সিংড়া থানায় দুটি পৃথক জিডি ও এজাহার দাখিল করেছেন।
তিনি আরো জানান, প্রায়ই ওই অফিসের সামনে থেকে মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। তারপরও কোন ব্যবস্থা নেই।
ভুক্তভোগি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, সিসি টিভি ক্যামেরা আওয়াতার মধ্যেই একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মোটরসাইকেল চুরি করছে। চুরির পর থানায়  জিডি করেও মোটরসাইকেলের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোটর সাইকেল চুরির বিষয়ে উপজেলা আইন শৃংখলা ও মাসিক সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করা হলেও কোন কাজ হয়নি। আজ পর্যন্ত চুরি যাওয়া কোন মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এবিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নতুন এই থানায় যোগদানের পর একটি মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর চুরির বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, চুরির বিষয়ে পুলিশের কোন কার্যকর ভূমিকা নেই। তার অফিসের সামনে থেকে মোটর সাইকেল হারানো বিষয় নিয়ে তিনি নিজেই বিব্রত। সিসি টিভির মধ্যেই একটি সিন্ডিকেট মোটরসাইকেল চুরি করছে। তবে সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে চোরদের সনাক্ত করার চেস্টা চলছে।

স/অ