সিরাজগঞ্জের রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যা: বোন পপিকে চাকরি দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামের মেধাবী তরুণী রুপা খাতুনকে (২৭) চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার ২ মাসের মাথায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম রুপার বোন পপিকে চাকরি দিয়ে তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন। মঙ্গলবার দুপরে ঢাকায় অবস্থানরত রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সরকারি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগে তার বোন পপির চাকরি দেওয়া হয়েছে।

দুপুর দেড়টায় দিকে প্রতিষ্ঠানের ঢাকা কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. জগলুল হায়দার পপির হাতে তার সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। বগুড়ার এসেনশিয়াল ড্রাগের কার্যালয়ে তাকে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুপার পরিবারের পাশে থাকায় তার মা হাসনা হেনা (৬৩) পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মোহাম্মাদ নাসিমের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ে হারানোর বেদনা মুছে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে আমরা অভিভূত। সেই সঙ্গে আমি পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও দাবি করছি মেয়ের দ্রুত কার্যকর করার জন্য। আমি আমার জীবদ্দশায় মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।

এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রুপার পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানাতে এসে নগদ ১ লাখ টাকা অনুদান ও রুপার বোন পপিকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে রুপা হত্যা ও গণধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইলের মধুপুরের অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কাইয়ূম সিদ্দিকী আদালতে গ্রেপ্তারকৃত ৫ আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

প্রসঙ্গত গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা পুলিশ ময়মনসিংহ ঢাকা মহাসড়কের পঁচিশ মাইল এলাকার সুমী নার্সারীর নিকট রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে উদ্ধার করেন রুপাকে।
পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসেন। ওইদিনই রুপাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে টাঙ্গাইলের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এমন ধারণা থেকে শনিবার মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ।

ঘটনার তিনদিন পর ২৭ আগস্ট সোমবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান। এদিকে এ ঘটনায় রাতেই মধুপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় গণপরিবহনের শ্রমিক বাসের চালক হেলপারসহ ৫ ধর্ষক। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মধুপুর থানা পুলিশের কাছে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং পরে টাঙ্গাইলের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করে। ৩১ আগস্ট আদালতের আদেশে রুপার লাশ উত্তোলন করে তাড়াশের আসানববাড়ী গ্রামের বাড়িতে আনা হয় এবং বাবা জেলহক প্রামানিকের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

ধর্ষিত ও খুন হওয়া মোচ্ছা. জাকিয়া সুলতানা রুপা বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স মাস্টার শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে শেষ বর্ষে অধ্যায়ণরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সে শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে চাকরি করছিলেন। ঘটনার দিন শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে সে শেরপুর থেকে বগুড়া আসেন। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে উঠেন রুপা।