সিদ্দিকের এক খিলি পানের দাম ১০৫০ টাকা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এক খিলি পান খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ৩০-৪০ মিনিট। আমাকে আগে দেন তাড়া আছে, আবার অনেকে ধৈর্য হারিয়ে চলেও যান। এখানে এক খিলি পান বিক্রির তালিকায় রয়েছে সর্বোচ্চ ১০৫০ টাকা, সর্বনিম্ন ১০ টাকা পর্যন্ত।

দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সৌখিন ক্রেতারা কিনছেন নবাব পান, জমিদার পান, নাটোরের বনলতা পান, আয়ুর্বেদিক পান, বিয়াই-বিয়ান পান, শালি-দুলাভাই পান, হাসি-খুশি পান, নতুন বাবুর হাতের পান, ভালোবাসার পান, বন্ধু-বান্ধবীর পান, জনতার পান, খয়ের জর্দ্দা, আবার কেউবা কিনছেন মিষ্টি পান।

এমনটি দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঈদমেলা বাঘা দরগাহ শরিফের গেটের সামনে সিদ্দিক কবিরাজের পানের দোকানে। তিনি ২৮ বছর ধরে ব্যবসা করে এলেও এই ঐতিহ্যবাহী ঈদমেলায় ২০ বছর ধরে খিলি পানের ব্যবসা করে আসছেন।

সিদ্দিক কবিরাজ (৫২) নাটোরের লালপুর উপজেলার জয়রামপুর-বেড়িলাবাড়ি গ্রামের মৃত গরিবউল্লার ছেলে। হরেকরকম জর্দ্দা ও মসলা দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন স্বাদের পান। বাহারি এ পান খেতে দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে।

পান বিক্রেতা সিদ্দিক কবিরাজ জানান, অভাব অনটনসহ অর্থনৈতিক ব্যাপক অসচ্ছলতায় তাকে বাধ্য করেছে পান বিক্রি করতে। বড় ধরনের ব্যবসা করতে মোটা অঙ্কের পুঁজির প্রয়োজন। তার সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে ছিল সে স্বপ্ন।

১৯৮৭ সালে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন এই খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ২৮ বছর পানের দোকানদারি করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি এ মেলায় আট দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন।

তার লাইসেন্সধারী পানের দোকান। তার দোকানের লাইসেন্স নম্বর ১৮৬৭। সিদ্দিক কবিরাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পানের খিলি ব্যবসায়ী। তার দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা আছে- আপনজনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দেবেন, না লাগলে দেবেন না।

সিদ্দিক কবিরাজ আরও জানান, এই মাসে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে তিনি এই মেলায় আট দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন পণ্যের দামসহ যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়।

পাশাপাশি মেয়ে শিখা খাতুন স্থানীয় কলেজের একাদশ শ্রেণি ও ছেলে শান্ত হোসেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। নিজে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি।

তবে টাকার অভাবে যাতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন সিদ্দিক কবিরাজ। ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পানের মূল্যের তালিকার মধ্যে নবাব পান ১০৫০ টাকা, জমিদার পান ৫১০ টাকা, নাটোরের বনলতা পান ৪২০ টাকা, আয়ুর্বেদিক পান ২৫০ টাকা, বিয়াই-বিয়ান পান ২১০ টাকা, শালি-দুলাভাই পান ১৭০ টাকা, হাসি-খুশি পান ১১০ টাকা, নতুন বাবুর হাতের পান ৯৫ টাকা, ভালোবাসার পান ৫০ টাকা, বন্ধু-বান্ধবীর পান ২৫ টাকা ও জনতার পান ১০ টাকা।

মঙ্গলবার মেলা পরিদর্শন করতে এসে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা ৫০ টাকা মূল্যের একটি পান নেন।

এ সময় তিনি বলেন, এর আগেও তার কাছে থেকে পান খেয়েছি। তার পান খেলে মনে হয় মুখ থেকে পান ফুরাচ্ছে না। খেতে খুব সুস্বাদু। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেলার বিভিন্ন স্টোল ঘুরে দেখেন এবং খাদ্যসামগ্রীসহ যাবতীয় জিনিসপত্রে মান ঠিক রাখার নির্দেশ দেন।

বাঘা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল লতিফ মিঞা ও স্থানীয় কলেজশিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মেলায় পান বিক্রি করে আসছেন সিদ্দিক কবিরাজ। তার পান খাওয়ার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিক্রিও ভালো হয়।

সিদ্দিক কবিরাজ বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় পান বিক্রি করে বেড়াই। স্থানীভাবে ব্যবসা করি না। ভ্রাম্যমাণ হিসেবে এ ব্যবসা করে আসছি। যেখানে বড় বড় মেলা বা অনুষ্ঠান হয় সেখানে যাই। এভাবে দীর্ঘ ২৮ বছর চলছে। আমার সাত ভাইবোনের মধ্যে আমি বড়। বাবা ৫ বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করতে কোনো বেগ পেতে হয় না।