সাড়ে ৮’শ টাকার লেহেঙ্গা, সাড়ে তিন হাজার: ৮ ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের জরিমানা

নাটোর প্রতিনিধি:
পরিবার পরিজনদের ঈদের নতুন পোশাক কিনে দিতে এখন দোকানগুলো ছুটছেন ক্রেতারা। যে যার স্বাধ্য মত পরিবার-পরিজনদের কিনে দিচ্ছেন পছন্দের পোশাক। তবে অন্যাণ্যে বছরের তো এবারও তরুনীদের পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকে লেহেঙ্গা সহ অন্যান্যে পোশাক। কিন্তু এই পোশাকটির প্রকৃত মূল্য যখন সাড়ে ৮’শ টাকা, তখন যারা সাড়ে তিনহাজার টাকায় কিনছেন, তখন ক্রেতাদের চোখ তো কপালে উঠতেই পারে। শুধু লেহেঙ্গা নয়, ছোট বাচ্চাদের সাড়ে তিন’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকায়।

বুধবার দুপুরে সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে লেহেঙ্গা সহ অন্যান্যে পোশাকের দামের এমন আকাশ-পাতাল তফাৎ দেখে বিষ্মতি হয়েছেন। কম দামে পোশাক কিনে বেশি দামে বিক্রির অপরাধে ৪টি গার্মেন্ট ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেছেন ২১হাজার টাকা।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, সিংড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় নাসির বস্ত্রালয় অধিক মূল্যে পোশাক বিক্রয় করছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই গার্মেন্টের দোকানে অভিযান পরিচালনা করে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ নাজমুল আহসান।

এসময় একটি লেহেঙ্গার গায়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা মূল্য একদর লিখে দোকানটির সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রকৃত মূল্য তালিকা দেখতে চাইলে অপরাগতা প্রকাশ করে দোকন মালিক নাসির উদ্দিন। এসময় একই কাপড়ের একই লেহেঙ্গার দাম অন্য দোকানে প্রকৃত মূল্য তালিকায় সাড়ে ৮’শ টাকা দেখে বিষ্মিত হয়ে পড়েন ভ্রাম্যমান আদালত। পরে অধিক মূল্যে পোশাক বিক্রয়, ভাউচার ও মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করার অপরাধে নাসির বস্ত্রালয়কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে ১০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত সীমিত লাভে পোশাক বিক্রির জন্য নির্দেশ দেন।

অপরদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালত একই বাজারের পাশবর্তী আজাদ ক্লথ ষ্টোর, মেসার্স অনন্যা গার্মেন্ট ও ইত্যাদি গার্মেন্টে অভিযান পরিচালনা। এসময় ছোট মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক ২হাজার থেকে ৪হাজার টাকা একদর টাঙিয়ে বিক্রয় করতে দেখে ওই সকল পোশাকের ভাউচার ও মূল্য তালিকা দেখতে চায় ভ্রাম্যমান আদালত। পরে দোকান মালিকের প্রকৃত মূল্য তালিকায় সাড়ে তিন’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন সবাই। পরে গার্মেন্ট দোকান মালিকগুলোকে আরো ১১হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় আদালত পরিচালনার খবর পেয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রায় অর্ধ অতাধিক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেয়। ভ্রাম্যমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন সিংড়া থানার এস আই ইব্রাহীম হোসেন, সেনেটারী ইন্সপেক্টর নুরুজ্জামান ও উদয় কুমার সরকার সহ অন্যান্যেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সারদুল ইসলাম বলেন, ঈদকে টার্গেট করে পোশাক বিক্রেতারা ইচ্ছামত দাম আদায় করে। তাছাড়া পোশাকের গায়ে একদর লিখে রাখার কারনে ক্রেতারা আর দাম করার সাহস পায় না। যার কারনে প্রকৃত মূল্য কত সেটা জানার কোন অবকাশ থাকেনা। ফলে যা দর লেখা থাকে তাই দিয়েই পছন্দের পোশাক কিনতে হয়।

সিংড়া বাজারে পোশাক কিনতে আসা ডাহিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, রিতিমত ক্রেতাদের পকেট ডাকাতি। মাত্র সাড়ে আট’শ টাকা দামের লেহেঙ্গা সাড়ে তিন হাজার টাকা হয় কিভাবে। চারগুণ লাভে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে। সারা বছলের লাভ তারা এই ঈদেই তুলে নেয়। তবে ভ্রামম্যান আদালতের এমন অভিযান অব্যাহৃত থাকলে বিক্রেতারা বেশি দামে পোশাক বিক্রির সাহস পাবে না।

এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, মাত্র সাড়ে ৮’শ টাকার লেহেঙ্গা বিক্রি করছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। প্রকৃত মূল্য তালিকা দেখার পর হতবাক হয়েছি। একটা পোশাক বিক্রি করে চারগুণ লাভ করছে ব্যবসায়ীরা।

ইউএনও আরো বলেন, ছোট বাচ্চাদের সাড়ে তিন’শ টাকার পোশাক বিক্রি করছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। চলনবিলের পা ফাটা মানুষদের কাছ থেকে রীতিমত ব্যবসয়ীরা ডাকাতি করে টাকা আদায় করছে। পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী হিসেবে মাত্র ৮টি গার্মেন্টে এই অভিযান পরিচালনা করা হলো। তবে ঈদের আগ পর্যণÍ যাতে কোন ব্যবসায়ী বেশি দামে পোশাক বিক্রি করতে না পারে সে জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

স/আ