সাফল্য থেকে আর কতদূরে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন?

মার্কিন কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষার শেষ ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকের দেহে ভ্যাকসিনটি পুশ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য জানিয়েছেন ফাইজারের শীর্ষস্থানীয় এক নির্বাহী কর্মকর্তা।

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ফাইজারের ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল রিসার্চ দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম গ্রুবার জানান, ফাইজার ও বায়োএনটেক এর যৌথভাবে তৈরি কোভিড-১৯ প্রতিরোধী সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষায় ইতোমধ্যে কিছু স্বেচ্ছাসেবী ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি নিয়েছেন।

জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে আগামী অক্টোবরের মধ্যে তাদের হাতে সম্পূর্ণ তথ্য আসবে এবং সেসব তথ্য জমা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে ফাইজার ও বায়োএনটেক। গ্রুবার বলেন, জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজারের ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (এফডিএ) জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে হলে ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনটির ট্রয়ালে অংশ নেয়া সব বয়সী অন্তত তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ক্ষেত্রে তা প্রয়োগের পর কার্যকর ফল পাওয়ার প্রমাণ সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন হবে।

প্রকৃতপক্ষে, ভ্যাকসিনটি কত দ্রুত অনুমোদন পাবে তা নির্ভর করছে প্লাজবো গ্রহণকারীরা ভাইরাসটি দ্বারা কত দ্রুত সংক্রমিত হয়েছেন। সাধারণত এতে এক সপ্তাহ সময় লাগে; ফাইজার যা এক সপ্তাহ আগে শুরু করেছে।

গ্রুবার জানান, ‘আরও কিছুদূর অগ্রসর না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত ব্যাপারটা বলা যাচ্ছে না। কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির প্রয়োজনীয় নিয়মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। ফাইজার তাড়াহুড়ো করে ভ্যাকসিন তৈরি পক্ষে নয়।’

নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে কোম্পানিগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো চাপ আছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রুবার বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কি হবে সেটি নিয়ে বলতে চাই না।’

তিনি আরও জানান, কীভাবে শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা করা যায় এ নিয়ে এফডিএ-এর সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতার অধিকারী ওষুধ প্রশাসন সংস্থা এফডিএর একটি দল এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ভ্যাকসিন বা টিকা শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে আলাদাভাবে কাজ করে। গ্রুবার জানান, ভ্যাকসিনের পরীক্ষা হয় ধাপে ধাপে। প্রথমে পূর্ণবয়স্ক, এরপর তরুণ এবং শেষে শিশুদের মধ্যে। কিন্তু তরুণ ও বয়স্কদের মধ্যে জ্বর ও কাধে ব্যথাসহ প্রতিক্রিয়ার হার বেশি।

সম্প্রতি ট্রায়ালে ফাইজারের ভ্যাকসিন নেয়ার পর ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক— যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫— তাদের মধ্যে জ্বর লক্ষ্য করা গেছে। এটি ছিল মাঝারি মাত্রায়।

এ ছাড়া বয়স্ক— যাদের বয়স ৬৫ থেকে ৮৫— তাদের মধ্যে এ হার ৮ শতাংশ। শিশুরা এ ধরনের প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারবে না। এ কারণে তাদের জন্য আলাদা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান গ্রুবার।

তিনি বলেন, ফাইজার এফডিএর কাছে তথ্য প্রদান করতে যাচ্ছে এবং শিশুদের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে। এটি দ্রুত শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

ট্রায়ালে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের ১৯ শতাংশ কিংবা তারও বেশি লাতিন এবং কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী। ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর আস্থা তৈরির জন্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের ক্রমাগত আহ্বানে কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন এবং নেটিভ আমেরিকানদের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।