সাফজয়ী ফুটবলার আজ অসহায়

সিল্কসিটি স্পোর্টস ডেস্ক :

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক রজনী কান্ত বর্মন। তার পায়ের যাদুতে ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেসময় দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন রজনী। ১৯৯৯ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ গেমসের চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ, ওই দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন রজনী। দাপটের সঙ্গে খেলেছেন জাতীয় দল এবং দেশের বিভিন্ন ক্লাবে।

চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি ভারতের হুগলী জেলায় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় রাস্তায় পড়েন রজনী। একটি প্রাইভেটকার তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা প্রথমে পা কেটে ফেলার কথা বললেও পরে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করে পা কাটা থেকে রক্ষা পান। পুরোপুরি পঙ্গু না হলেও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন না রজনী। আর কবে ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে তারও নিশ্চয়তা নেই। তবে এমন বিপদের দিনে সাফজয়ী ফুটবলারের পাশে নেই ফুটবল অঙ্গনের কেউই।

বুধবার দুপুরে গাজীপুরের পিঙ্গাবহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সঙ্গে কথা বলেছেন রজনী। জানিয়েছেন নিজের দুঃখ-দুর্দশার কথা। চিকিৎসার জন্য ফুটবল খেলে গড়া নিজের শেষ সম্পদটাও বেঁচে দিলেও অভাব কমছে না সাবেক ফুটবলারের।

দুপুরে বাড়ির সামনের বৈঠকখানায় একাকী বসে ছিলেন রজনী। অথচ একটা সময় খেলার মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াতেন। তখন বাড়িতে আসলে কত মানুষজন আসতো তাকে এক নজর দেখতে। সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনি একাকী নিঃস্ব। রজনী কান্ত বর্মন বলেন, প্রায় এক যুগ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দেশের হয়ে গৌরব বয়ে এনেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি।

সোনালী সময়ে তাকে নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা থাকলেও আজ পাশে কেউ নেই। ভবিষ্যতে নিয়তি কোন পথে নিয়ে যায় সে নিয়েই ভাবনা, ভারতে চিকিৎসা করে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও ডান পা সম্পূর্ন অচল। কারো সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না। সহায় সম্বল সবই বিক্রি করে খরচ পরিচালনা করছি। এখন শুধু ভিটেমাটিটা আকড়ে ধরে আছি। অর্থের অভাবে আগামীর চিকিৎসাও এখন অনিশ্চিত।

তিনি জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে আসেন গাজীপুরের ফুলবাড়িয়ার বাড়িতে। গত আড়াই মাস আগে তার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে মারা যায় ভারতে। নিজের অসুস্থতার জন্য তার স্ত্রীকে বিদায় জানাতে ভারত যেতে পারেননি। অভাবের সংসারে দুই মেয়ের জনক রজনীর সন্তানরাও এখন ভারতের নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছেন। সংসারের বড় ছেলে হিসেবে রজনীর কাঁধে মা, ভাই ও বোনদের দেখভালের দায়িত্ব। বিশাল সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অবসরের পর একে একে তার সম্পদ বিক্রি করে এখন প্রায় নিঃস্ব হওয়ার পথে। অবাক হওয়ার বিষয় দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়ীতে অসহায়ত্বের দিনগুলো কাটিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা সরকার তার কোন খোঁজ নেয়নি। নিজের সর্বস্ব দিয়েও দেশের জন্য খেলে গেলেও নিজের অসহায়ত্বও এখন তাকে প্রশ্ন করে ফুটবলার না হয়ে বরং চাকুরীজিবি হলেও সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শেষ বয়সে কিছুটা হলে ভাল থাকা যেতো।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হয়েও অসুস্থ হয়ে এক বছর ধরে বিছানায় পড়ে রয়েছি। কেউ খোঁজ নেয়নি, একদিনের জন্যও ফুটবল ফেডারেশন থেকে ফোন করে একটু সান্ত্বনা মেলেনি। এটাতেই এখন পীড়া দেয় নিজের মনে। দেশের গৌরবের জন্য খেলার মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ালেও আজতো পাশে কেউ নেই। নিজের অসহায়ত্বের জন্য সরকার বা ফুটবল ফেডারেশনকে পাশে চান এক সময়ের এই মেধাবী খেলোয়াড়।