সাপাহারের সংগ্রামী ৫ জয়িতা

কাজী কামাল হোসেন:
সংসারের অভাব অনটন ও সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পাঁচ নারী।

জয়িতা খেতাব অর্জনকারী ও জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জনকারী নারীরা হচ্ছেন, উপজেলার ভিওইল গ্রামের হত দরিদ্র বর্গাচাষী রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রিনা বেগম, তিলনা বারদোয়াস গ্রামের শামসুল আলমের মেয়ে ছানোয়ারা বেগম, দিঘীর হাট মীরাপাড়ার আব্দুল ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী হাসিনা বানু, বাসুলডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক সাদেকুল ইসলামের স্ত্রী মমেজান বেগম ও গোয়ালা শিয়ালমারী গ্রামের হত দরিদ্র ইউসুফ আলীর স্ত্রী রোজিনা বেগম।

জানা গেছে, উপজেলার ভিওইলের রিনা বেগমের সংসারে প্রায় সময় দৈন্যতা লেগেই থাকত। স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চলত না। ২০১৩ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে হাঁস মুরগী পালন শুরু করেন। তিনি হাঁস মুরগী পালনের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন। তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকা পুঁজি বা মুলধন রয়েছে।

তিলনা বারদোয়াস গ্রামের দরিদ্র শামসুল আলমের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ছানোয়ারা বেগমের অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। তার আত্মীয়স্বজনরা তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু অভাবের মধ্য থেকেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় এক অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলার দোয়াশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

দিঘীরহাট মিরাপাড়ার হতদরিদ্র আব্দুল ওয়াহেদ আলী কৃষি কাজ ও দিনমজুরি করে কোন রকমে সংসার চালাতেন। সংসারে তিন ছেলে। স্ত্রী হাসিনা বানুর ইচ্ছে কষ্ট হলেও সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। হাসিনা বানুর স্বামীর সঙ্গে ক্ষেত খামারে কাজ করতেন। সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে হাসিনা বানু তার ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বর্তমানে প্রথম ছেলে দিঘীরহাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক, দ্বিতীয় ছেলে মিরাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং তৃতীয় ছেলে সাপাহার চৌধুরী চাঁন মোহাম্মাদ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক পদে চাকুরী করছেন।

বাসুলডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র সাদেকুল ইসলামের সাথে উপজেলার তুলসিপাড়ার মমেজানের বিয়ে হয় বেশ কয়েক বছর আগেই। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরাতে যৌতুক নিতে শারিরীক নির্যাতন করা হতো মমেজানকে। কিন্তু নির্যাতন সহ্য করেই মানুষের বাড়ীতে ঝিঁয়ের কাজ করেন তিনি। এরমধ্যে প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটি গরু বর্গা নেন। বর্তমানে তিনি কয়েকটি গরুর মালিক ও স্বামীকে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনে দিয়েছেন।

শিয়ালমারী গ্রামের দরিদ্র দিন মজুর ইউসুফ আলীর স্ত্রী রোজিনা বেগম। অর্থনৈতিক প্রতিকুলতা, কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি কয়েকটি নারী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ, যৌতুক সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখে চলেছেন। এছাড়া এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
স/শ