ক্লাসের সময়সূচি জানেননা প্রধান শিক্ষক: সাত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যপক অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাববগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককেরা বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর সময়সূচি সম্পর্কে জানেননা বলে খোদ অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম।

এনিয়ে অভিযুক্ত ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর শাস্তির সুপারিশ চেয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শফিকুল ইসলাম আকষ্মিকভাবে উপজেলার মনাকষা, দূর্লভপুর ও কানসাট ইউনিয়নের ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন।

তার মধ্যে রয়েছে- মনাকষা ইউনিয়নের মিরা গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতভাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানসাট শিকারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পারকানসাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূলর্ভপুর ইউনিয়নের কালুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাররশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস চলাকালের সময় পরিদর্শনকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের রুমে রান্না-বান্না করার হাড়ি পাতিল, শিশুদের ঘুমানোর জন্য দোলনাসহ অপ্রাসঙ্গিক আসবাবপত্র দেখতে পাওয়া যায়। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না বলে অভিযোগ পেয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষকদের অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষককেরা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এদিকে কানসাট শিকারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককেরা অনুপস্থিত থাকলেও তাদের হাজিরা খাতায় উপস্থিতি সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে, পারকানসাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়- সকল শিক্ষককেরা সংশ্লিষ্ট শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক অফিসে বসে আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন। ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি আমবাগানে খেলাধূলা করছিল। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত লেখা হলেও ওইসব ছাত্র-ছাত্রীদের নাম হাজিরা খাতা থেকে বাদ দেয়া হয়নি।

অপরদিকে, মোহনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরির্দশনকালে ইউএনও দেখতে পান ক্লাস চলাকালীন সময় ক্লাসে না গিয়ে সহকারী শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক কমনরুমে বসে আলাপচারিতা ও চা পানে ব্যস্ত ছিলেন। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে হৈ-চৈ ও খেলা ধুলা করছিল। এছাড়াও শিক্ষক হাজিরা খাতায় প্রতিনিয়ত ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়েছে।

কালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে তিনি জানতে পারেন ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয়না। এমনকি প্রধান শিক্ষকের কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল।

অন্যদিকে বাররশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়- বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে সামনের মাঠে ঘোরাফেরা করছে। ঠিক সকাল ১০.১০ মিনিটের সময় কোন ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা খাতায় উপস্থিতি নেয়া হয়নি।

সাতভাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাতে লাঠিসহ বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা যায়। তবে হাতে লাঠি থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ক্লাস থেকে বাইরে চলে যেতে না পারে সেজন্যই বারান্দায় বসে রয়েছেন তিনি। বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের মধ্যে দুইজনের ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিতি পাওয়া যায়।

পরিদর্শনের সময় ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. নাজনিন সুলতানা দৌড় দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসে সমাপনীর পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে গিয়েছিলেন। তবে বিদ্যালয়ের কোন মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার না থাকায় তার কথায় কোন সত্যতা নিশ্চিত পাওয়া যায়নি।

এই ৭টি বিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয়গুলো আকষ্মিকভাবে পরিদর্শন করা হলে অনেক বিদ্যালয়ের একই ধরণের চিত্র পাওয়া যাবে বলে ইউএনও মোঃ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার আট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বাইরের মাঠে প্রতিনিয়ত বসে থাকতে দেখা যায়। ইতোপূর্বে ওই আটটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলেও জানাগেছে।

স/অ