সাক্ষাৎকারে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি কামরুল ইসলাম চৌধুরী: উপশাখা খোলার দিকে বেশি নজর দেয়া হবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে ব্যাংকের শাখা আছে ১৪৮টি। বিদায়ী বছরে অনুমোদিত ১০টি শাখার মধ্যে ৯টি খোলা হয়েছে ও একটি শাখা প্রক্রিয়াধীন। তবে এবার শাখা নয়, উপশাখা খোলার দিকে বেশি নজর দেয়া হবে। ২-৩ জন কর্মকর্তা দিয়ে একটি উপশাখা পরিচালনা করা যায়। এতে খরচ কমে আসে। পরিচালন ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া সরকার ঘোষিত ব্যাংক ঋণে সুদের হার ৯ ও আমানতে ৬ শতাংশ ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।

শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান- সর্বোপরি দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা সবার মেনে নেয়া উচিত। আজ এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যাংকে সিঙ্গেল ডিজিটের সুদ যথাসময়ে কার্যকরের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সে হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন পাইনি, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। এ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর প্রাপ্য। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সে জন্য তাকে বেঁচে থাকতে হবে অনেক দিন। আমি তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া দেশের স্বাধীনতা কল্পনা করা যায় না। আজ আমরা স্বাধীন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং করছি। আমি একটি ব্যাংকের এমডি হয়েছি। এ কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর। তিনি নেই, কিন্তু তার আদর্শ আছে, আমরা সে পথে চলব। চলতি বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। দিবসটি উদযাপনে ব্যাংকের নানা আয়োজন রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে দুটি ‘মুজিব কর্নার’ স্থাপন করব। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে।

কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চলতি বছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে নতুন অনেক সেবা যোগ হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো, এজেন্ট ব্যাংকিং, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, মোবাইল ব্যাংকিংকে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়াসহ একগুচ্ছ নতুন সেবা রয়েছে। এসব সেবার বিষয়ে কিছুটা ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১০টি শাখায় ১০টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো খোলা হবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ১০ থেকে ১২টি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে এসব উদ্যোগের প্রসার ঘটানো হবে।

বিদায়ী বছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল২৩ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ২২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের এডি রেশিও ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমার মধ্যেই আছে। বিদায়ী বছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছর ছিল ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও রফতানি আয় বেড়েছে। ২০১৯ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ১৯ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আমদানি খরচ কমেছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৯ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি আয় এসেছে ১৬ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। যা ২০১৮ সালে ছিল ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রফতানি আয় বেড়েছে ৪৮৪ কোটি টাকা। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল ২৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু বিতরণ করা হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩৫৪ কোটি টাকা। বিতরণ হয়েছে ৩৭৯ কোটি টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৪০১ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে মাত্র ৬ মাসেই বিতরণ করা হয়েছে ২০৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিদায়ী বছরে ২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।