সাংবাদিকদের ওপর হামলার তদন্ত ও জবাবদিহি চায় সিপিজে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি ফর প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। ঢাকায় গত শনিবারের রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সিপিজে এ আহ্বান জানায়।

সিপিজে বলেছে, রাজনৈতিক সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ২৭ জন বাংলাদেশি সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

সিপিজের বিবৃতিতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বক্তব্য রয়েছে।

তারা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ, পুলিশকে বিএনপি সদস্যদের পেটানোর ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছেন। বিজেআইএম নামে একটি সংগঠণের বিবৃতি এবং আরো কয়েকজন সাংবাদিকের বরাত দিয়ে সিপিজে অভিযোগ করেছে, সাংবাদিকরা বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সমর্থকদের পাশাপাশি পুলিশেরও দ্বারাও আক্রান্ত হয়েছে।

সিপিজে প্রোগ্রামের পরিচালক কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা বলেন, ‘ঢাকায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমাবেশে অন্তত ২৭ জন বাংলাদেশি সাংবাদিকের ওপর হামলার দ্রুত ও স্বচ্ছ জবাবদিহিতা দেখাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও সমর্থকদের পাশাপাশি পুলিশকে অবশ্যই সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে এবং নিরাপদে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে খবর সংগ্রহের অধিকারকে সম্মান করতে হবে।

দৈনিক কালবেলা পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার মো. রাফসান জানি সিপিজেকে বলেন, তিনি পুলিশের ওপর বিএনপি সমর্থকদের হামলার ছবি তোলার সময় দুইজন বিক্ষোভকারী তার কাছে এসে ফোন এবং পরিচয়পত্র নিয়ে যায়। বিএনপি সমর্থকদের একটি দল তখন জানিকে ঘিরে ফেলে এবং বারবার নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তাকে লোহার রড, লাঠি ও পাইপ দিয়ে মারধর করে।

তিনি বলেন, প্রায় ২০ মিনিট পর তিনি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন তিনি। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তার ফোন ও পরিচয়পত্র ফেরত দেওয়া হয়নি।

দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার আলোকচিত্র সাংবাদিক এস এ মাসুম সিপিজেকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ছবি তোলার সময় তার মাথায় বারবার পেছন থেকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। হামলাকারীদের তিনি চিনতে পারেননি।

ঢাকা টাইমস পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার মো. সিরাজুম সালেকিন সিপিজেকে বলেন, তিনি মোটরসাইকেলে করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সংঘর্ষের ঘটনা কভার করতে যাওয়ার সময় একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি পড়ে যান এবং তার ডান পায়ের দুইটি হাড় ভেঙে যায়।

সালেকিন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, তাকে হামলার কারণ তিনি তার প্রেস ব্যাজ পরেছিলেন। তার মোটরসাইকেল ঢাকা টাইমসের একটি স্টিকার ছিল, যা আওয়ামী লীগের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন করেছে।

ডেইলি স্টারের খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভকারীরা তাদের সমাবেশ কভার করার সময় দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক আবু সালেহ মুসাকে মারধর করে।

এএফপির ভিডিও রিপোর্টার মোহাম্মদ আলী মাজেদ সিপিজেকে বলেন, পুলিশ এবং বিএনপি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও কভার সময় পাঁচ থেকে ছয়জন বিক্ষোভকারী তাকে ঘিরে ফেলে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা তার ক্যামেরা এবং অন্যান্য সংবাদ সরঞ্জামের ক্ষতি করে। প্রায় তিন মিনিট ধরে বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায়, পিঠে এবং ডান কাঁধে আঘাত করা হয়। এরপর সাংবাদিক ও পথচারীদের সহায়তায় তিনি হামলাকারীদের কাছ থেকে পালাতে সক্ষম হন।

নিউজ ওয়েবসাইট বাংলা ট্রিবিউন এবং ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ও ফটো এজেন্সি সোপা ইমেজেসসহ আন্তর্জাতিক আউটলেটগুলোর সঙ্গে কাজ করা ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহের সময় বিএনপির বিক্ষোভকারীরা তাকে ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারে এবং পদদলিত করে।

সংবাদ সংস্থা ফেয়ার নিউজ সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করা ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার সালাহউদ্দিন আহমেদ শামীম সিপিজেকে বলেন, তিনি পুলিশের ওপর বিএনপির বিক্ষোভকারীদের হামলার খবর সংগ্রহ করছিলেন। সে সময় সাত থেকে আটজন বিএনপি সমর্থক তাকে ঘিরে ধরে এবং প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে পেটায় এবং লাথি মারে।

কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান ফটোসাংবাদিক শেখ হাসান আলী এবং নিউ এজ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আহমেদ ফয়েজ সিপিজেকে বলেন, বিএনপি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে তারা আঘাত পান। এতে তারা সামান্য আহত হন।

শেখ হাসান আলী সিপিজেকে জানান, ওই সংঘর্ষের সময় কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রী সাংবাদিক লুৎফর রহমানকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি বাঁশের লাঠি দিয়ে কাঁধে আঘাত করে।

একুশে টিভির ফটোগ্রাফার মো. হানিফ রহমান সিপিজেকে বলেন, তিনি এবং একুশে টিভির রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান একটি পুলিশ চৌকিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা কভার করছিলেন। তখন তারা ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল মো. হানিফ রহমানকে ঘিরে ধরে লাঠিসোঁটা ওপাইপ দিয়ে মারধর করে এবং তৌহিদুর রহমানকে ধাক্কা দেয়।

দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক রবিউল ইসলাম রুবেল সিপিজেকে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সংঘর্ষের কভার করার সময় তিনি বিএনপি সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে ছিলেন। তখন ১৫ থেকে ২০ জন লোক সাংবাদিকদের ‘সরকারের দালাল’ বলে চিৎকার করে এবং তাকে ইট ছুঁড়ে মারে।

দৈনিক কালবেলার রিপোর্টার জনি রায়হান সিপিজেকে বলেন, সমাবেশ কভার করার সময় বিএনপি সমর্থকরা তাকে মারধর করে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে তিনিও আহত হন।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক সাকিল সিপিজেকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ কভার করার সময় তার দিকে ইট ছুড়ে মারার পর তার একটি পা ভেঙে গেছে।

সিপিজে শত শনিবার সহিংসতায় আহত আরো কয়েকজন সাংবাদিকের বক্তব্য তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। সিপিজে বলেছে, মন্তব্যের জন্য তারা বিএনপির মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তাদের থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।