নওগাঁয় সরকারী সম্পত্তি বেদখল, উচ্ছেদে প্রশাসনের গড়িমসির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নওগাঁর নিয়ামতপর উপজেলার নাকইল এলাকায় প্রায় ১৪ বিঘা সরকারী সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। এরই মধ্যে দখলকাররা বন্ধ করে দিয়েছে চলাচলের রাস্তা। এতে সেখানকার কয়েক হাজার একর জমির ফসল ঘরে তোলা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন লোকজন।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলদারদের মদদ দিচ্ছেন। ফলে অভিযোগ দেয়ার চার মাসেও উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এনিয়ে গড়িমসির অভিযোগও উঠেছে। নাকইল মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত সরকারী সম্পত্তিতে বসতি গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ১০৩৬ দাগের ৪ দশমিক ৪৩ একরের ওই জায়গাটুকু বর্তমানে ডহর শ্রেণির। এর আগে সেটি ছিলো হাট। এখন পুরো এলাকাই বেদখল।

দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন গ্রাম পুলিশ সদস্য ও মৃত সেফাতুল্লাহর ছেলে আব্দুস সাত্তার, ওই মৃত মেছের আলীর ছেলে পচা, আইচাঁনের ছেলে শহিদুল ইসলাম, অবুর আলীর মেয়ে হেনা বিবি, কিনুর ছেলে আজিজুল, আজিজুলের ছেলে বিপুল, সমসের আলীর ছেলে রেজাউল বাবু ডঙ্কা প্রমুখ। এরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। সবমিলিয়ে সেখানে স্থায়ী আবাস গড়েছে অন্তত: ৩০টি পরিবার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাত বদলও হয়েছে এসব সম্পত্তি।

এদিকে, রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় গত বছরের অক্টোবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ২৬ জন বাসিন্দা লিখিত অভিযোগ দেন। গত বছরের ১২ অক্টোবর এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দেন একই এলাকার বাসিন্দা মোসা: শামসুন্নাহার।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সরকারী ওই সম্পত্তি একসময় হাট ছিলো। এখন সেখানে ৩০টি বসতি রয়েছে। দখলদাররা শুরুতেই হাটে ঘর নির্মাণ করেন। হাটটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় গড়ে তোলেন স্থায়ী বসত। এরই মধ্যে জায়গা কেনা বেচা হয়েছে। তারপরও এর ভেতর দিয়েই পাশের ফসলি জমিতে নামতেন স্থানীয়রা। কিন্তু গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে চলাচলের রাস্তাটুকুও বন্ধ করে দেয় দখলদাররা।

সেখারকার কয়েকজন কৃষিজমির মালিক জানিয়েছেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকার জমি থেকে ফসল তোলাসহ নানান কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে লোকজন। অভিযোগ করেও দখল মুক্ত হচ্ছেনা।

তাদের অভিযোগ, উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের লোকজনই এলাকাটি দখলে নিয়েছেন। চেয়ারম্যানই দখলদারদের উচ্ছেদে বাধা দিচ্ছেন। তবে কয়েক দফা চেষ্টায় মুঠোফোন সংযোগ না পাওয়ায় এনিয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের।

তবে ওই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলার শ্রীমন্তপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হারেজ আলী। তিনি বলেন, সরেজমিন তদন্তে গিয়ে তিনি অভিযোগের সতত্যা পেয়েছেন। গত বছরের ২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সেই প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর ২০ নভেম্বর এনিয়ে শুনানীও হয়েছে। সাত দিনের মধ্যেই রাস্তা বের করে দেয়া কথা ছিলো। কিন্তু এখনো রাস্তা বের হয়নি। দখল মুক্ত হয়নি সরকারী সম্পত্তি। এর কারণ জানাতে পারেননি হারেজ আলী।

জানতে চাইলে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মো: মাহফুজুল আলম। তিনি বলেন, সরকারী সম্পত্তি দখলে রাখার সুযোগ নেই। অবৈধ দখল উচ্ছেদ দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এটি চলমান। এনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।

স/শ