সম্ভাবনা ও সন্দেহে ‘মানবতার দেয়াল’!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
প্রচারের অভাব ও উদ্যোগটা সন্দেহের চোখে দেখার কারণে তিন মাসেও সাড়া ফেলতে পারেনি `মানবতার দেয়াল’।বাসার অপ্রয়োজনীয় কাপড় সুবিধাবঞ্চিদের জন্য রাস্তার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার সুযোগ করে দিতে একটি দেয়াল নির্ধারণ করার উদ্যোগই মানবতার দেয়াল। সুবিধাবঞ্চিত মানুষ চাইলেই যেখান থেকে প্রয়োজনের কাপড়টা নিয়ে যাবেন নির্দ্বিধায়।
রাজধানীজুড়ে ছয়টি জায়গার মানবতার দেয়ালের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে, পত্রিকায় পড়ে কিংবা একান্তই নিজেদের আকঙ্ক্ষার জায়গা থেকে এই উদ্যোগটি নেওয়া হলেও ধারাবাহিকতা রক্ষায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেউ এগিয়ে না আসা এবং অনেক বেশি প্রচার করতে না পারার কারণে তিন মাস পার হয়ে গেলেও ব্যাপকভাবে উদ্যোগটি ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। আবার কয়েকটি জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে, খোলা জায়গায় জামাকাপড় অপরিচ্ছন্নভাবে পড়ে আছে। উদ্যোক্তারা একবেলা আসেন কিনা আশেপাশের কেউ তা বলতে পারেন না। আর মানবতার দেয়াল আছে এমন এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা বলছেন, হুট করে এলাকায় এমন উদ্যোগ দেখছি, কারা করছে জানি না, এর উদ্দেশ্য কী তাও জানি না। সে কারণে আমরা নিজেদের এ কাজে যুক্ত করিনি।
একহাত দুই হাতে ছড়াতে ছড়াতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘মানবতার দেয়াল’ নামে এই স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমটি চালু হলেও শুরুটা হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকেই। ২০১৫ সালে প্রথম এই দেয়াল চালু করেন মাগুরার আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আখতার। তিনি সেটির নাম দিয়েছিলেন মহানুভবতার দেয়াল।  তিনি বলেন, ‘এখনও আমার স্কুলে এই দেয়াল আছে। মূলত শিক্ষার্থীরাই কাপড় দেয় এবং অন্য শিক্ষার্থী যাদের দরকার তারা নিয়ে যায়। আমার ধারণা ছিল, যে শিশুদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড়চোপড় আছে, তারা অন্যদের দিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গাটা বুঝতে শিখুক।’
একটি প্রশিক্ষণে ইয়াসমিন আখতারের কাছ থেকে পরিকল্পনাটি জানতে পারেন কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ মুকসেদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীনা নাজনীন মিস্টি। তার হাত ধরে এই বিদ্যালয়ের দেয়ালে টানানো হয়— অপেক্ষাকৃত বিত্তবানদের অপ্রয়োজনীয় কাপড়। মিস্টি বলেন, ‘আমার স্কুলেতো আছেই, আশেপাশের স্কুলগুলোও এখন শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকায় যখন এমন দেয়াল হয়েছে, ফেসবুকে কথাবার্তা চলছে— তখন আমাকে অনেকেই বিষয়টি জানিয়েছে। আমি সবাইকে বলেছি— ইয়াসমিন আপার কাছে শিখেছি এই জিনিসটা।’ তবে কেবল প্রাইমারি স্কুলে থাকায় এবার সদরে এই দেয়াল বানানোর উদ্যোগ নিতে চান মিস্টি।
রাজধানীর মিরপুর, ভাষানটেক, উত্তরা, মহাখালী, মোহম্মদপুর, লালবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এই দেয়াল। উত্তরার উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান  বলেন, ‘আমারটা নিজের উদ্যোগেই করা। বাসায় এত রকমের কাপড় জমে, সেগুলো যদি কারোর কাজে লাগে ক্ষতি কী। এই শীতে ভারী যে কাপড়গুলো আমরা ব্যবহার করছি না, সেটা বাইরে ঝুলিয়ে দিলে কেউ না কেউ নিয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই করা। প্রথমে এলাকায় একটি দেয়ালে করা হলেও পরে দেয়ালটি ভেঙে ফেলায় আমরা আরেকটি জায়গায় স্থানান্তর করেছি।’
উদ্যোগটি নভেম্বরের দিকে শুরু হলেও এপর্যন্ত তেমন সাড়া না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে। আর এটি একজনই করবে এমন না, এলাকাভিত্তিকও হতে পারে। দেয়ালটা নির্ধারিত থাকবে, বাকি যে যা দিয়ে যাওয়ার দেবে।তা না হলে এটি বিস্তৃতি লাভ করবে না।’
মহাখালী ওয়ারলেস এলাকায় মানবতার দেয়ালের উদ্যোগ নিয়েছেন শাহীন মাতব্বর। তিনি বুধবার (১৬ জানুযারি) তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য ও সেবা করার উদ্দেশ্যে আজ অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিশেষ করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অনেক ভাইবোন তাদের মূল্যবান জামাকাপড় দিয়েছেন। এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বড় ভাই ব্রাদারও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’
মিরপুর দুই নম্বরে দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা হয় ষাটোর্ধ এক ব্যক্তির সঙ্গে। পাশেই তার নিজের বাড়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে দেখলাম আছে, পরে দেখলাম কয়দিন নাই, আবারও দেখি কারা যেন জামা রেখে যায় রোজ, নিয়ে যাওয়ার পরিমাণ কম। আমরা এলাকার মানুষ স্পষ্ট জানি না, এর সঙ্গে কারা যুক্ত। সে কারণে সন্দেহ রয়ে গেছে।’ এধরনের উদ্যোগ খুব কাজের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি জড়িত না থাকলে তো ভালো। আমার কাছ থেকে তারা যেন কাপড় নিয়ে আসে।’