সমাবেশে খারাপ কথা বললেই বিএনপিকে গণধোলাই : লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘আমরা গতকাল (বিএনপির সমাবেশে) ঘটনা ঘটাতে পারতাম। আমরা ঘটাইনি। তার মানে এটা মনে করেন না যে, আমরা ঘটাবো না। এরপর যদি রাজশাহী মহানগরীর মধ্যে এই ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি উত্তপ্ত কথা বলে আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ যারা আছেন সবাইকে অনুরোধ করে রাখলাম- অনুমতি নেয়ার দরকার নেই। খারাপ কথা বললেই তাদেরকে গণধোলাই দিবেন।’

মঙ্গলবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দলটির নেতা মিনুসহ অন্যদের কটূক্তির প্রতিবাদে বুধবার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এসব কথা বলেন।

সমাবেশে মেয়র লিটন বলেন, “গতকাল বিএনপির নেতারা বলেছেন, আমাদের নেতা যখন হুকুম দিবেন সেই মুহুর্তে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে নেবে পড়বে। তারা এ কথাও বলেছে, বাংলাদেশে সকল বিষয়ে রাজনৈতিক মিমাংসা রাজপথে হয়েছে, তারাও রাজপথে মিমাংসা করবে। হাসি লাগে, যারা টানা ১৩ বছরে ১৩টি লোমও ছিড়তে পারলো না, তারা কিনা রাজপথ গরম করবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে লিটন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, কথায় কথায় সুযোগ পেলেই আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার বিষদগার করে বিএনপি। মুখের মধ্যে থাকা বিষ উগড়ে দেয়। মিনু ভাই, আপনি ১৭ বছর রাজশাহী সিটির মেয়র ছিলেন। এই সময়ে যদি ১১৭ কোাটি টাকার উন্নয়ন করতেন তাহলে আমি খুশি হতাম। আপনি ১৭ বছর রাজশাহীবাসীর সময়টা নষ্ট করে দিয়েছেন। ১৭ বছর শুধু চাপাবাজির উন্নয়ন করেছেন। আপনার উন্নয়নের নজির রাজশাহীবাসী জানে। আর খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার উন্নয়নের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মানুষ জানে। সেই কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখন সুখে আছে। খালেদা জিয়ার বয়স হয়ে গেছে। আমি তাকে নিয়ে কটূক্তি করতে চাই না। তিনি ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছেন, কোনো কথা নেই কোনো আওয়াজ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম বিভাগীয় সমাবেশের নামে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে। কিন্তু কি দেখলাম! তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশ, জাতির পিতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েই ক্ষান্ত হন নি। তারা ৭৫এর ১৫ আগস্টের মতো কালো অধ্যায় সৃষ্টি হুঙ্কার দেয়।’ তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই দিন নেই, এরপর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে শান্তির শহর রাজশাহীর পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সাথে নিয়ে তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।’

তিনি মিনু-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে রাজশাহীবাসীর সামনে ক্ষমা না চাইলে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে।’

এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে টার দিকে কুমারপাড়াস্থ নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিরো পয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদের সঞ্চালনায় এ সময় নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী, সহ-সভাপতি মকলেসুর রহমান মিলন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখসহ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, থানা আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু- আপনার ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জবাব আওয়ামী লীগ রাজশাহীর জনগণকে সাথে নিয়েই দিবে। আপনার দুঃসাহস হয় কী করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা-কে নিয়ে কটুক্তি করার?’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে বিশ্বে আজকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভূক্ত করেছে। সেইখানে মূর্খের দল বিএনপি ও তাদের নেতা মিজানুর রহমান মিনু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করে জাতির সামনে তাদের হীন মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক ভাবে বিএনপি দেউলিয়াদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’

তিনি মিনু-কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইতোপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন, সেই দিনও আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করেছিলো। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদে ভীত হয়ে আপনি রাজশাহীবাসীর সামনে ক্ষমা চেয়েছিলেন। মিনু-কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডাবলু সরকার আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সততার দিক দিয়ে বিশ্ব দরবারে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা-কে নিয়ে কটুক্তি করলে আপনাকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’ তিনি মিনু-কে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে অবিলম্বে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএইচ/এস