সবুজ আর ফুলে ফুলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে রাসিকের সড়ক বিভাজন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটা এলাকা থেকে শুরু করে ফল গবেষণা ইন্সটিটিউট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তাটির মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক বিভাজনে এখন শোভা পাচ্ছে হাজার হাজার পামওয়েল গাছ। গাছের চারাগুলো গত বছর রোপন করা হয়েছে। আর এরই মধ্যে বেশ বেড়েও উঠেছে। অন্যদিকে নগরীর রেলগেট থেকে সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার সড়ক বিভাজনে শোভা পাচ্ছে ফুল আর সবুজে ছেয়ে যাওয়া নানা প্রজাতির গাছে। তবে ফুলগাছের সংখ্যায় বেশি। ফলে রাজশাহী নগরীর সড়ক বিভাজনগুলো ভরে উঠেছে সবুজে আর ফুলে ফুলে। এতে করে পথচারীদের মাঝে বাড়তি ভালোলাগাও কাজ করছে। আবার ফুল আর সবুজে ভরা উঠা সড়ক বিভাজনে যেনো প্রাণ ফিরেছে। নগরীর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মানুষের মাঝে আকর্ষণ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর সড়ক বিভাজনগুলোতে হাজার হাজার ফুল ও নানা প্রজাতির গাছে ভরে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে কনকচূড়া ফুল, জারুল ফুল, কৃষ্ণচূড়া ফুল, গাঁধাচূড়া ফুল, কাঁঞ্চন ফুল, হাইকা ফুল, পলাশ ফুল, চেরিফুল, কাঠকরলসহ নানা জাতের ফুলে ভরে গেছে সড়ক বিভাজনগুলো। পাশাপাশি রয়েছে পাম গাছ। পামগাছুলোর সবুজ পাতাভরা ডালগুলো মেলে ধরেছে পাখির মতো। যেনো উড়তে চায় আকাশে। আর গোলাপী, বেগুনি, লাল, নিলসহ নানা রংয়ের ফুলে ফুলে এ এক অন্যন্য সৌন্দর্যের মাত্রা ছড়িয়েছে সড়ক বিভাজনগুলোতে।

গতকাল সোমবার সকালে সড়ক বিভাজনের পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন সেলিনা হায়াত নামের এক কিশোরী। জানতে চাইলে সেলিনা বলেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশের রাস্তাগুলোর পাশে বা রাস্তার মাঝখানে ফুলের ছবি দেখে মন ভরে যায়। কিন্তু সেই ছবি এখন আমাদের রাজশাহীতেই পাওয়া যায়। তাই দেখেও খুব আনন্দিত হয়। এখন আমরাই রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডারে ফুলগাছের ছবি নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট করি। এতে রাজশাহীর বাইরের জেলার মানুষরাও খুশি হয়।’
কথা হয় প্রবীন ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকবর আলীর সঙ্গে।

তিনি নগরীর বন্ধগেট এলাকার বাসিন্দা। আকবর আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়ক বিভাজনে একসময় নানা প্রজাতির গাছ ছিল। গাছগুলো যখন কেটে সাবাড় করা হলো, তখন খুবই কষ্ট পাচ্ছিলাম। গাছ কেটে যখন ফুলগাছ লাগানো হচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল এটা কি করছে রাসিক? সবুজ ধংস করে এ কী করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এখন আবার সড়কের মাঝখানে সবুজে ভরে উঠতে দেখে খুব ভালো লাগে। সকালে যখন ফুটপাত ধরে হাঁটি তখন মনটাই এক অজানা আনন্দে ভরে উঠে। ফুলের সুবাশও নিতে নিতে হাঁটতে হাঁটতে যেন প্রকৃতিতে হারিয়ে যায়।

রাসিকের গাছ পরিচর্যাকারী কর্মচারী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, যেদিন বৃষ্টি হয় না, সেদিন সিটি করপোরেশনের পানির গাড়িতে করে ফুল ও পামগাছগুলোতে পানি দেওয়া হয়। গাছের গড়া পানি দিয়ে ঠিক রাখা হয়। এছাড়াও নানাভাবে পরিচর্যা করা হয় প্রতিদিন। এ কারণে গাছগুলো দ্রুত নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করছে। পামগাছগুলোও বেড়ে উঠছে বেশ।’

রাসিক সূত্র মতে, ২০১৬ সালে এই রাজশাহী নগরীর পরিবেশ দূষণরোধে সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১২ সালে সারা দেশের মধ্যে বৃক্ষরোপনে রাজশাহী নগরী প্রথম হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে এবারো রাসিক বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহীতে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগে এরই নগরীর সড়ক বিভাজনেই কেবল ৮ হাজার গাছের নতুন চারা রোপনের কাজ চলছে। এছাড়াও নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ২০০টি করে গাছের চারা ও শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে আরো ৮ হাজার গাছের চারা রোপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটা এলাকা থেকে শুরু করে ফল গবেষণা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তায় ৮ হাজার পামগাছ গত বছর রোপন করা হয়েছে। গাছগুলো এরই মধ্যে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। পামগাছে বাড়তি সৌন্দর্য এনেছে নগরীর। পথচারীরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সড়ক বিভাজনে থাকলে অনেক সময় ঝড়ে ডাল-পালা ভেঙে বা গাছ উপড়ে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। সেইদিক থেকে সরে এসে আমরা সড়ক বিভাজনে অল্প পানি প্রয়োজন হয় এমন ফুলসহ শক্ত ডালপালাহীণ বিভিন্ন প্রজাতির সবুজগাছের চারা রোপন করছি। যাতে করে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাই। পাশাপাশি ভারি ডালপালা না থাকায় গাছ উপড়ে পড়ারও ভয় থাকবে না। আবার নগরীর পরিবেশও ঠিক থাকবে।’

 

স/আর