সন্তান লাভের আশায় লালপুরে গোসাই আশ্রমে বট বৃক্ষের তলে নারীরা

লালপুর প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে শ্রী. ফকির চন্দ্র গোসাইয়ের আশ্রমে সন্তান লাভের আশায় অশ্রমের অক্ষয় বট বৃক্ষের তলে আচল পেতে বসে আছেন কয়েকজন নিঃসন্তানহীন নারী।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সরোজমিনে গেলে উপজেলার পানসিপাড়া শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ্ বৈঞ্চব গোসাইয়ের আশ্রমে ৩২৬তম নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠানে অক্ষয় বট বৃক্ষের তলে আচল পেতে সন্তান লাভের আশায় বসে থাকতে দেখা যায় নারীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মর্জিনা বেগম জানান লোক মুখে শুনেছি এই বট বৃক্ষের নিচে স্নান করে বসলে সন্তান সম্ভাবনা লাভ করা যায় সেই আশায় আমার মেয়ে স্বপ্নাকে নিয়ে এসেছি। একই উপজেলার পান্নাপাড়া এলাকার শ্রীমতি জানান আমার ছেলের বউয়ের দীর্ঘ ৬বছর যাবৎ কোন সন্তান না হওয়ায় গোসাইজির আশ্রমে পুকুরে স্নান করে অক্ষয় বট বৃক্ষের তলে বউমাকে আচল পেতে সন্তান লাভের আশায় গোসাইজির ধ্যানে বসিয়ে রেখেছি, যদি তার আচলে বৃক্ষের পাতা পড়ে তাহলে অবশ্যই সন্তান লাভ করবে।

লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার সীবেন দাস জানান ৯বছর ধরে কোন সন্তান না হওয়ায় বিভিন্ন মানুষের মুখে শুনে গত বছর এই দিনে আমার স্ত্রীকে নিয়ে সামনের সান বাধানো পুকুরে স্নান শেষে এই অক্ষয় বট বৃক্ষের নিচে বসিয়ে দিয়েছিলাম। তার আচলে একটি অক্ষয় বট বৃক্ষের পাতা পড়লে সেই পাতা বেটে খাওয়ার পর সন্তান লাভ করেন। সীবেন দাসের স্ত্রী সূবর্ণা রানী জানান ৯ বছর পর একটি কন্যা সন্তান হওয়ায় আমার পরিবারের সকলের মাঝে আনন্দ ফিরে এসে তাই এবছর সাধু বাবার আশ্রমে আমার কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এমনিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সন্তান লাভের আশায় নিঃসন্তান নারী পুরুষরা ছুঠে আসেন উপজেলার পানসিপাড়া শ্রী. ফকির চন্দ্র গোসাইয়ের আশ্রমে নবান্ন উৎসবে।
আশ্রমের প্রধান সেবাইত পরমানন্দ সাধু জানান বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দূড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসি পাড়া গ্রামে গহীন অরণ্যের একটি বট বৃক্ষের নিচে আস্তানা করেন শ্রী ফকির চন্দ্র বৈষ্ণব। এখান থেকে সাধু ধ্যান তাপস্য ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমা গঙ্গাস্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে হাজারো ভক্তবৃন্দ, দর্শনার্থী ও সাধকরা উপস্থিত হন।


তিনি আরো জানান বিভিন্ন জেলা থেকে নিঃসন্তান নারীরা পুকুরে স্নান শেষে সন্তান লাভের আশায় অক্ষয় বট বৃক্ষের তলে আচল পেতে বসে থাকেন। যাদের আচলে বৃক্ষের পাতা পড়ে তারা কন্য সন্তান ও ফল পড়লে পুত্র সন্তান লাভ করেন।
কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেওয়াল ও দরজায় গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। ভেতরে রয়েছে ঝাড় বাতি। সোনা, রোপা ও কষ্ঠি পাথরে তৈরি মূল্যবান কারুকার্যগুলি চুরি হয়ে গেছে।
আশ্রমের মধ্যে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়া। যার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুরা রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে ভক্তদের জন্য আরেকটি কুয়া। বড় বড় মাটির চুলায় রান্না হয় ভক্তদের প্রসাদ।