সন্তানের মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে মাসের পর মাস শোক পালন করে বানর মায়েরা 

কমবয়স্ক মায়েদের বাচ্চার মরদেহ বহন করার সম্ভাবনা বেশি। এবং দুর্ঘটনা বা অন্যান্য আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর চেয়ে অসুস্থতায় মারা যাওয়া শিশুদের বহন করে বেড়ানোর হার বেশি।

বানরসহ অন্যান্য প্রাইমেট বর্গের মায়েরা তাদের সন্তানের মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে ঘুরে ঘুরে শোক পালন করে, যা মাঝে মাঝে কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এমনটিই উঠে এসেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) অধীনস্থ বিশেষজ্ঞরা ৫০টি ভিন্ন প্রাইমেট প্রজাতির মায়েদের সন্তান মারা যাওয়ার পর দেখানো প্রতিক্রিয়া নিয়ে হওয়া মোট ৪০৯টি প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

৮০ শতাংশ প্রজাতির মধ্যেই ‘মৃত বাচ্চার মরদেহ বহন’ করার আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে।

প্রাইমেটরা মৃত্যুর ব্যাপারে কতটা সচেতন তা নিয়ে যদিও বিতর্ক রয়েছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাইমেট মায়েরা এ ব্যাপারে জানে, অথবা সময়ের সাথে সাথে অন্তত বুঝতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোন প্রাইমেট তাদের বাচ্চাদের মরদেহ বহন করার আচরণ প্রদর্শন করবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে তাদের প্রজাতির উপর।

লেমুরের মতো প্রাইমেট, যারা বিবর্তনমূলকভাবে অনেক আগেই বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তারা বাচ্চাদের মরদেহ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না। বরং এর পরিবর্তে অন্যান্য উপায়ে শোক প্রকাশ করে তারা। মৃতদেহের কাছে বারবার ফিরে এসে বা মৃত সন্তানের জন্য ডাকাডাকি করে শোক প্রকাশ করে তারা।

গবেষণা দলটি আরও দেখেছে যে, কমবয়স্ক মায়েদের বাচ্চার মরদেহ বহন করার সম্ভাবনা বেশি। এবং দুর্ঘটনা বা অন্যান্য আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর চেয়ে অসুস্থতায় মারা যাওয়া শিশুদের বহন করে বেড়ানোর হার বেশি।

আর সবশেষে, কতদিন পর্যন্ত মায়েরা মরদেহ বয়ে বেড়াবে সেটা মূলত নির্ভর করে মা-সন্তানের সম্পর্ক কতটা দৃঢ় ছিল তার উপর। অল্পবয়সে মারা গেলে সেই মরদেহ দীর্ঘদিন বহন করে বেড়াতে দেখা যায় মায়েদের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহন করে বেড়ানোর সময়ও হ্রাস পেতে শুরু করে।

গবেষণাটির লেখক এবং ইউসিএলের নৃবিজ্ঞানী আলেসিয়া কার্টার বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাইমেটরা মানুষের মতোই মৃত্যুর ব্যাপারে অবগত হতে পারে”।

“তবে যেটা আমরা জানি না, এবং হয়তো কখনোই জানতে পারবো না, সেটা হচ্ছে প্রাইমেটরা আদৌ বুঝতে পারে কি না যে মৃত্যু সর্বজনীন- যে সকল প্রাণীই, এমনকি তারাও একদিন মারা যাবে।”

কার্টার আরও বলেন, “বিবর্তনে মিল থাকার কারণে মানুষের সামাজিক বন্ধন অনেকটাই অন্যান্য প্রাইমেটদের মতো। যে কারণে মানুষের মৃতদেহ সৎকার ও শোক পালনের উৎপত্তি সামাজিক বন্ধনের মাঝে থাকার সম্ভাবনাই বেশি”।

“প্রাইমেটদের মধ্যে এখন যে মৃত্যু-পরবর্তী আচরণ দেখা যায় সেটা হয়তো একসময় মানুষের মধ্যেও ছিল। এবং হয়তো বিবর্তনের সময় মানুষ এসব আচারে পরিবর্তন এনেছে।”