সতর্কতা থাকলেও নেই সচেতনতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর প্রবেশপথগুলো দিয়ে ঢুকতেই ঘুমন্ত যাত্রীরাও অসহনীয় গন্ধ পেয়ে বুঝতে পারেন, তিনি পৌঁছে গেছেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। ঢাকার প্রায় সব প্রবেশপথের পাশেই ময়লা পড়ে থাকা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ময়লা না ফেলার জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর এলাকার মানুষের সচেতনা বাড়ছে না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজেদের সুবিধামতো যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছেন। বাসাবাড়ি আর কারখানার ময়লাও ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশেই। দুর্গন্ধের মধ্যে থেকে অভ্যস্ত রাজধানীবাসীর নাকে সে খিটখিটে গন্ধ না এলেও গ্রামের সবুজ-শ্যামল পরিবেশ থেকে আসা জেলা শহরের সাধারণ মানুষের নাকে ঠিকই লাগছে। তাই নেতিবাচক ধারণা নিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। মহাসড়কের পাশে এমন ময়লার স্তূপ তৈরি হচ্ছে হরহামেশা, তারই একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইল ইউনিয়নের রায়েরবাগ অংশের মুজাহিদনগর।

এলাকাবাসী ও রাজধানীমুখী মানুষদের অভিযোগ, এভাবে রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে জায়গা দখলের পাঁয়তারা করে কিছু মানুষ, আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও কাজের ফাঁকিবাজির অংশ হিসেবে এমনটা করে। ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা তদারকি কর্তৃপক্ষ শুধুই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকে। যাত্রীরা বলছে, রাজধানীতে ঢুকতেই এক ধরনের অস্বস্তি নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে। আর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছে, জনসচেতনতার অভাবে সমস্যাটি ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। এলাকাটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে নেওয়া হলেও কোনো নির্বাচন না হওয়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রশস্ত ব্যস্ত সড়কের মাতুয়াইল ইউনিয়নের রায়েরবাগ মুজাহিদনগর বাদামতলী অংশের মূল সড়কের পাশে সাদা কালিতে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, ‘এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ।’ সাইনবোর্ডের নিচে এবং পাশে চার-পাঁচটি ময়লার ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোনো চালক পাওয়া গেল না। ময়লাভর্তি ভ্যানগুলো আশপাশের কয়েকটি এলাকা থেকে এনে এখানে রেখেছে বলে জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদটি পড়েছে ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওয়ার্ড থাকলেও কোনো কাউন্সিলর নেই এই এলাকায়।

কদমতলীর এক স্থানীয় বাসিন্দা মো. মকলেছুর রহমান বলেন, ‘বাসার পাশে এমন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আমাদের বসবাসের জন্য খুবই অসুবিধাজনক। সামান্য বৃষ্টিতেই ময়লা-আবর্জনাগুলো উঁচু রাস্তা থেকে নিচে নেমে আসে। স্বাভাবিক দুর্গন্ধের তুলনায় তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বাসার সামনে ময়লা নিয়ে আসে পানির স্রোত। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলা হলে এবং পরে তা পুড়িয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে ধ্বংস করে ফেলা হলে এসব ঝামেলায় পড়তে হতো না।’

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৯ জুন প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আটটি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে একই বছরের ৩০ জুলাই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নে মোট ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া আটটি ইউনিয়নের মধ্যে মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ধনিয়া ও শ্যামপুর ইউনিয়ন রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের দায়িত্বে থাকা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের অধীনে যাওয়ার কারণে কিছুটা অবহেলা তো হচ্ছেই। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে কিছু কাজ করছে।’

এলাকার সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কে দেখছে। জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘এটা ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে টুকটাক উন্নয়নের দায়িত্ব আমাদের ওপরই পড়ে। তবে সিটি করপোরেশনের গেজেট হওয়ার পর তারা একটি চিঠিও পাঠিয়ে জানিয়েছে যে আমরা যাতে কোনো রকমের উন্নয়নমূলক কাজ না করি। তাই এই সমস্যাগুলো সমাধানের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওপরই বর্তায়।’

কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী শুকরান ট্রেডার্সের মালিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূল সড়কের পাশে কেন এমন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হবে। ফেলা হলেও সেটা কেন সরানো হবে না। মূল সড়কের পাশের এমন চিত্র রাজধানীর অলিগলির বেহালের বহিঃপ্রকাশ। তাই দায়িত্ব কার, সেটি না ভেবে শহরের সৌন্দর্য আর বসবাসের পরিবেশের কথা মাথায় রেখে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ময়লা ফেলার জন্য মহাসড়কের আশপাশকেই সবাই বেছে নেবে।’

মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. রাশেদ আলী বলেন, ‘স্থানীয় অসচেতন সাধারণ মানুষই যত্রতত্র ময়লা ফেলে এসব নষ্ট করছে। আসলে নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় এসব হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’

সিটি করপোরেশনের কোনো অবহেলা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে সিটি করপোরেশনের অবহেলা বলতে, তারা পুরোদমে কাজ করতে পারছে না। ময়লা পরিষ্কারের জন্য আমাদের একটি সংগঠন আছে; কিন্তু ওই এলাকায় সম্ভবত নেই। যেহেতু জায়গাগুলোর এমন করুণ দশা, আমি বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানাব। তাহলে হয়তো তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে।’