সংরক্ষিত নারী আসনেও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনেও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে রয়েছেন। সাধারণ আসনের সংসদ সদস্যদের তুলনায় কম হলেও সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতদের মধ্যেও পেশায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবসায়ী। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত ৫০ জন সংসদ সদস্যের হলফনামায় দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ কথা জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত ৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৩ জনের (২৬ শতাংশ) পেশা ব্যবসা। এ ছাড়া ৭ জন (১৪ শতাংশ) চাকরিজীবী, ৫ জন (১০ শতাংশ) শিক্ষক, ৫ জন (১০ শতাংশ) গৃহিণী, ২ জন (৪ শতাংশ) আইনজীবী ও ২ জন (৪ শতাংশ) কৃষিজীবী। ৮ জন (১৬ শতাংশ) তাদের পেশা ‘রাজনীতি’ উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া ৮ জন (১৬ শতাংশ) বিভিন্ন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আইন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজনই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার শতকরা ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ (১৩ জন) এবং জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিতদের ১০০ শতাংশই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ দলটির দুজন সংসদ সদস্যই পেশায় ব্যবসায়ী।

এর আগে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সুজন জানিয়েছিল, ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের পেশা ব্যবসা। শতকরা হিসাবে সংসদ সদস্যদের ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮৫ জন বা মোট সংসদ সদস্যের ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত ৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করেন মাত্র ১০ জন (২০ শতাংশ)। আয়ের ঘর পূরণ করেননি ২ জন। বছরে ৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন ২০ জন (৪০ শতাংশ), ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় করেন ১০ জন (২০ শতাংশ), ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা আয় করেন ৫ জন (১০ শতাংশ) এবং ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেন ২ জন (৪ শতাংশ)। কোটি টাকার অধিক আয় করেন যে ২ জন, তারা হলেন হলেন- শাম্মী আহমেদ (১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৭১ টাকা) এবং অপরাজিতা হক (১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭১৭ টাকা)। তারা উভয়েই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত ২ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১ জনের (৫০ শতাংশ) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম এবং ১ জনের (৫০ শতাংশ) ৫০ লাখ টাকার অধিক।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি জানান, সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ কোটি টাকার বেশি আয় করলেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই হার ৪ শতাংশ। এখানে সাধারণ আসন এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে আয়বৈষম্য লক্ষ করা যায়। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত ৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩০ জন (৬০ শতাংশ) স্নাতকোত্তর (২ জন পিএইচডিসহ), ৮ জন (১৬ শতাংশ) স্নাতক, ৪ জন (৮ শতাংশ) এইচএসসি, ৫ জন (১০ শতাংশ) এসএসসি এবং ৩ জন (৬ শতাংশ) এসএসসির চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সংরক্ষিত নারী আসন ইতিবাচক। কিন্তু এখন বাস্তবে কতটুকু নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সত্যিকার অর্থে নারী আসনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হলে নারীরা পরবর্তী সময় সাধারণ আসন থেকে নির্বাচন করে আসতেন। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়। দলের প্রধানের অনুগ্রহ হিসেবে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়।