সংযত আচরণ ইমানদারের লক্ষণ

জীবজগতের মধ্যে মানুষই একমাত্র জীব মানুষ হয়ে উঠতে যার পরিচর্যার দরকার হয়। যা অন্য কোনো জীবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেক বাবা-মায়ের লক্ষ্য থাকতে হবে তাঁর সন্তান যেন মানবিক গুণ অর্জন করে। কেউ যদি খারাপ আচরণ করে কোনো মুমিনের উচিত নয় তার সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করা। কারণ মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। তার আচরণ হওয়া উচিত মানুষের মতো। পশুর  মতো বিবেকবর্জিত বা কান্ডজ্ঞানহীন আচরণ মানুষের হওয়া উচিত নয়। এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণযোগ্য।

হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কালের দাস (হীনভাবে অন্যের আচরণের মতো আচরণকারী) হয়ে যেও না। বোলো না যে লোকেরা যদি ভালো ব্যবহার করে তবে আমরাও (তাদের সঙ্গে) ভালো ব্যবহার করব। আর তারা যদি দুর্ব্যবহার করে তবে আমরাও তাদের সঙ্গে জুলুম করব। বরং তোমরা নিজেদের এই আদর্শের অনুসারী বানাও যে লোকেরা ভালো ব্যবহার করলে তোমরাও ভালো ব্যবহার করবে এবং তারা জুলুম করলে তোমরা তাদের অনুসরণ করবে না।’ তিরমিজি।

মানুষকে অবশ্যই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। যাকে তাকে অনুসরণ ও অনুকরণ কোনো খাঁটি মানুষের কাছ থেকে আশা করা যায় না। সমাজের সবাই খারাপ পথে চললে সে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানো কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না। সমাজের গতি যেদিকেই হোক না কেন মুমিনদের অবশ্যই ন্যায়-ইনসাফ ও সদাচরণ করতে হবে। সদাচরণ অন্য মানুষের মঙ্গল কামনা, সংঘাত এড়িয়ে চলা মুমিনদের ভূষণ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এমনকি যুদ্ধের মতো সংঘাতময় পরিবেশেও মুমিনের কর্তব্য হলো সংঘাত এড়িয়ে চলা যায় কি না সে চেষ্টা করা।

 

আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন দুশমনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকাকালে সূর্য ঢলে পড়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এরপর তিনি লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন- হে লোকেরা! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সংঘর্ষ কামনা কোর না; বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও শান্তি কামনা কর। আর যখন শত্রুর মুখোমুখি হও তখন ধৈর্য ধারণ কর (অবিচল থাক)।’ বুখারি, মুসলিম।

‘ইসলাম সদাচরণকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি হাদিস তার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘যে লোক আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে হয় ভালো কথা বলবে নচেৎ নীরব থাকবে। মহান আল্লাহ আপন কালামে বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন তা-ই লিখে (সংরক্ষণ করে) রাখার জন্য তার সঙ্গে রয়েছে সদাতৎপর প্রহরী।’ (একবার) হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! কীভাবে নাজাত পাওয়া যাবে?

রসুল (সা.) বললেন, তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাড়িকে (পরিজনদের) সুরক্ষিত রাখ। তোমার ত্রুটি-বিচ্যুতির (পাপের) জন্য কাঁদো আর মনে রেখ পাষাণ-চিত্তরা আল্লাহর নৈকট্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে।’ আবু দাউদ, তিরমিজি। আরেক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে বাচাল, অশ্লীল ও অসংযত কথাবার্তায় অভ্যস্ত ব্যক্তি।’ আল্লাহ আমাদের সবাইকে সদাচরণের তৌফিক দান করুন।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন