‘সংবাদ সংগ্রহের অপরাধে’ দণ্ডিত হবেন তুরস্কের কুর্দিপন্থী সাংবাদিকরা!

শুধু গত এক সপ্তাহেই ১৮ গণমাধ্যমকর্মীকে বিচারিক কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে তুরস্ক। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন কুর্দিশ সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন বলে জানা গেছে। এসংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে ভয়েস অব আমেরিকা, গতকাল শুক্রবার।

কুর্দিশ মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তাঁরা গুজব ছড়াচ্ছেন এবং অধিকাংশই বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত্ আর বাকিদের বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের ২৯১১ ধারা লঘ্নন করায়।

ভিওএ জানাচ্ছে, তুরস্কের মিডিয়াগুলো যেগুলো সভা-সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করে কখনো কখনো ‘অবৈধ সমাবেশ আয়োজনের’ জন্য অভিযুক্তও হয়। গত এপ্রিলে, তুর্কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদেশ দেয় যে অনুমোদিত বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের অনুমতি নিতে হবে।

এদিকে অধিকার আইনজীবীরা মনে করেন- এ ধরনের পদক্ষেপ গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার জন্য করা হচ্ছে। ‘আদেশটি বেশ সমস্যাযুক্ত। কেননা এখানে ওই সব সাংবাদিকদের বিক্ষোভ কভার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাঁদের সরকারি অনুমতি আছে। বাকিরা এসব করতে পারবেন না।’ ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন আইনজীবী এরসালেন আকতান। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত আইনের এই ধারায় ফ্রিল্যান্স বা বিরোধী মতের কোনো সাংবাদিক কোনো সভা বা বিক্ষোভ সমাবেশ কভার করতে পারবেন না। এবং এটা সরাসরি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।’

এ বছরের জানুয়ারিতে কুর্দিশদের অধিকার নিয়ে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভ্যান ব্যাকে। এবং সেটি কভার করার দায়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে রুসেন তাকভা নামে এক সাবাদিককে।

একজন কৌঁসুলী বলছেন, শুধু এই প্রতিবাদ সমাবেশের ‘সংবাদ সংগ্রহের অপরাধে’ ১৮ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে তাকভার। যাই হোক, অন্য একজন এই কেসটি বাদ দিয়েছেন ‘প্রমাণের অপ্রতুলতার’ কারণ দেখিয়ে।

তাকভা ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, আমিও জানতাম কেসটি টিকবে না। আমি তো একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে নিজের কাজ করেছি। যখন একজন প্রকৃত প্রসিকিউটর এলেন এবং তিনি বিষয়টিতে অন্য দিকে নিয়ে গেলেন।

হাইরি দেমির কুর্দিপন্থী ডিকল নিউজ এজেন্সিসহ আরো কয়েকটিতে কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পাটি (পিকেকে)-র নামে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এবং বলা হচ্ছে তিনি ওই বেআইনি সংগঠনের একজন সদস্য।

দেমিরের একটি মেমরি স্টিক ছিল, যেটিতে সিরিয়ায় তার নিয়োগের ছবি ছিল। আঙ্কারায় তার বাড়ি থেকে সেটি চুরি হয়। দেমির ভিওএ-কে বলেন, ‘সেই ডাকাতির ছয় মাস পর সেই কার্ডের ছবিগুলো আদালতে আমার মামলার ফাইলে প্রমাণ হিসেবে বেরিয়ে আসে।’ কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) কারাবন্দি কো-চেয়ারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘সেলাহাতিন দেমিরতাসের সাথে আমার আগের টেলিফোন কথোপকথনগুলোও আমার আদালতের ফাইলে অন্তর্ভুক্ত ছিল।’

ডেমিরের নবম শুনানি মঙ্গলবার ছিল এবং মামলাটি এখনও চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ২২ বছরের জেল হতে পারে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ