শ্রমিকের কোনো শীত গরম নাই, কাজ করলে হামরা খেতে পাবো

 নিয়ামতপুর প্রতিনিধি :
ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা তখন আটটা ছুঁইছুঁই। কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারিদিক। তার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ঘর থেকে যেন বের হওয়ায় দায়। মাথা আর কানে শক্ত করে গামছা পেচিয়ে গায়ের চাদরে নাক মুখ ঢেকে চুপটি করে বসে আছেন চামেলি মুড়িয়ারি। পাশেই তার জা আসমানী মুড়িয়ারিও গায়ের চাদরে নাক মুখ ঢেকে রেখেছেন ।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গাঙ্গোর বাজার এলাকায় রাস্তার ধারে একটি চাতালের বারান্দায়  তারা বসেছিলেন। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার  বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষি  শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক।
চামেলি মুড়িয়ারি জানালেন, তাদের বাড়ি সিরাজপুর গ্রামে। যাবেন সামনের মাঠে।  বোরো ধান রোপণ করতে।  পাশের গ্রাম থেকে আরও কয়েকজন আসবে তাই বসে আছেন। তারা আসলেই তাদের সঙ্গে যাবেন।
আসমানী মুড়িয়ারি জানালেন, শ্রমিকের কোন শীত-গরম নাই। কুয়াশা লাগাক আর কাঠফাটা রোদ বের হোক আমাদের কাজে যেতেই হবে। কাজ করলেই হামরা খেতে পারব। কাজ না করলে খাওয়া বন্ধ। তাই ঠান্ডা দেখলে আমাদের হয় না। কাজে যেতেই হবে।
বরেন্দ্র বাজার এলাকার মাঠে শীত নিবারণ করতে আগুন জ্বালিয়েছেন কয়েকজন। কাছে যেতেই খড়ের আরেকটা আঁটি জ্বালিয়ে দিয়ে  আজিজুল ইসলাম বললেন, আজ খুব ঠান্ডা পড়েছে ভাই। তার সঙ্গে এই ফাঁকা মাঠে আবার হুহু করে বাতাস হবার লাগিছে। সকাল থ্যাকা বিছন (ধানের চারা) তুলনো তো। খুব ঠান্ডা ল্যাগা গেছে। তাই সবাই মিলে আগুন পোহাচ্ছি। ঠান্ডার দিনে পানিতে খুব কামড়ায়। হামরা শ্রমিক মানুষ। কাদো-পানিত ভয় করলে হামাকের হবে না।
সাবিলপুর এলাকার মাঠে ধান রোপণ করছিলেন ছুটিপুর গ্রামের লাইলী মুড়িয়ারি। বললেন,  হামরা চুক্তিতে ধান লাগাই। যত বেশি ধান লাগাতে পারমু তত বেশি টাকা পামু। ঠান্ডার ভয় করলে তো আর হামাকের চলবে না। গরিব মানুষ, কাজ করে খেতে হবে।
গায়ে মোটা একটা জ্যাকেট পরে মালকোচা মেরে চৌরাপাড়া মাঠে ধান রোপণ করছিলেন আব্দুল বারিক। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কাছে আসলেন। বললেন, শীতের দিনে পানির ভিতর নেমে থাকতে তো কষ্ট হয়ই। কষ্ট হলে  আর কী করবেন। কিছু করার নাই।
এই কথা বলে আবার জমিতে নেমে পড়লেন ধান রোপণ করতে।উল্লেখ্য, নওগাঁয় সোমবার  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। একইসঙ্গে দেশে আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের টেলিপ্রিন্টার অপারেটর আরমান হোসেন বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু বেশি কিংবা কম থাকছে। আজ সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি নওগাঁতে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় শীতের প্রকোপ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা আরও তিন-চার দিন চলতে পারে। পুরো জানুয়ারি জুড়েই শীতের তীব্রতা থাকতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।