শোভন ও রাব্বানীর এক বছর: ১১১ ইউনিটের মধ্যে মাত্র দুটিতে কমিটি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি এক বছর পূর্ণ করল। এ সময়ে ১১১টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে মাত্র দুটিতে নতুন কমিটি দিতে পেরেছে বর্তমান নেতৃত্ব। দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাস পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করলেও তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে লাগাতার আন্দোলনে নামেন পদবঞ্চিতরা। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দফায় দফায় বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা করেননি।

এতে করে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সংগঠনটিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার দুই মহানগর ছাত্রলীগের অন্তর্গত ইউনিটগুলোর কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

এসব শাখাতেও সাংগঠনিক কাজে মন্থর গতি দেখা গেছে। গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দু’দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, এক বছরে সংগঠনটির ১১১টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে মাত্র দুটিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পেরেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আর কেবল চারটি ইউনিটে সম্মেলন হয়েছে। তবে সম্মেলন করেও ইউনিটগুলোতে কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি তারা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই বেশিরভাগ সম্মেলন দিয়ে দেব। এক বছরে মাত্র দুটি কমিটি হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে রাব্বানী বলেন, ডাকসু যেভাবে ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে হয়েছে, সেভাবে ছাত্রলীগের ২০ বছরের অচলায়তন ভেঙে এবারের কমিটি হয়েছে।

আমাদের আগের চার কমিটি ভিন্ন একটা ধাঁচের ছিল। সেখানে কমিটি আগে থেকে ‘সেট করা’ থাকত। তখন পকেটের লোক দিয়ে কমিটি করা ছিল উদ্দেশ্য। ছাত্রলীগ সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর ফলে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে এর দায় যতটা না আমাদের, তার চেয়ে অনেক বেশি পারিপার্শ্বিকতা ও সাবেকদের অসহযোগিতা।

শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারণের প্রায় ১০ মাস পর ১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ১৫ দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়েও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি শোভন-রাব্বানি। আওয়ামী লীগ সভাপতির বেঁধে দেয়া ২২ এপ্রিলের মধ্যেও কমিটি গঠনে তারা ব্যর্থ হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বেঁধে দেয়া সময়ও উপেক্ষিত হয়েছে। এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে ৩০১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অনেক নেতার বিরুদ্ধে অপকর্ম ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে।

কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি থেকে শুরু করে বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসা, চাকরিজীবীর নাম রয়েছে। আবার সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা প্রায় অর্ধশত নেতা বাদ পড়েছেন। বিভিন্ন অপরাধ-অপকর্মে জড়িত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রেওয়াজ পরিপন্থী উপায়ে পদপ্রাপ্ত বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম ১৬ মে প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা। রাজু ভাস্কর্যে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মঙ্গলবার বিকালে বলেন, বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হবে। কিন্তু সেটা তো তাদের (পদবঞ্চিত আন্দোলকারী) চাপে করা হবে না।

বারবার সময় দিয়েও কেন কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধাপে ধাপে আমরা কাজটি করেছি। বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে যাদের প্রমাণ আছে তাদের বাদ দিয়ে দেব।

এদিকে, তৃণমূল সংগঠনে ছাত্রলীগের কেন্দ্র থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন উপজেলা কমিটি দিচ্ছেন। আবার জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের জন্য আসলে কেন্দ্রীয় নেতারা ‘নিজেদের ইচ্ছেমতো’ নাম সংযুক্ত করতে বলছেন। তা না হলে কমিটির অনুমোদন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তৃণমূল সংগঠনের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী বলেন, এ শাখাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আগের ‘সেট আপ’। তাই তাদের ওপর আস্থা রাখা কঠিন। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাকে তো প্রাধান্য দিতেই হবে।

তবে কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এ সুযোগের অপব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এক বছরের কমিটি যে দুই বছর আড়াই বছর ধরে আছে এবং তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে সেটাই তো অনেক বড় ব্যাপার।

তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা : দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রথম বর্ধিত সভা আহ্বান করেন মঙ্গলবার। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সংগঠনটির কার্যালয়ে সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয়েছে সন্ধ্যা ৭টার পর।

এর আগে ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন বেলা ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের যেতে দেরি হওয়ায় বিকাল তিনটায় তা শুরু হয়। সেদিন হিটস্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন এক ছাত্রলীগ নেতা। এ ঘটনার পর ফের বিলম্ব করে সভা শুরু হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

সভায় উপস্থিত অন্তত পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, বিকাল ৪টায় বর্ধিত সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সঠিক সময়ে উপস্থিত হননি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সভাস্থলে আসেন সন্ধ্যা ৬টায়, আর সভাপতি আসেন ৬টা ৪৫ মিনিটে। ফলে নির্ধারিত সময়ের অন্তত তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় বর্ধিত সভা শুরু হয়। রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সভা চলছিল।