শেষ হলো রাবির ভিসি-প্রোভিসির মেয়াদ: নতুন কারা আসছেন? চলছে গুঞ্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের চার বছর মেয়াদের শেষ কার্যদিবস ছিল গতকাল রবিবার। এর আগে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এবং ১২তম উপ-উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 

তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে করে আলোচনায় আসছে কারা হচ্ছেন নতুন ভিসি-প্রোভিসি? নাকি পুরনোরাই আবার স্বপদে বহাল থাকছেন? এমন জল্পনা-কল্পনাও চলছে রাবি ছেড়ে রাজশাহী নগরজুড়েও।

 

 

  • রাবির একাধিক সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে নিশ্চিত করেছে, নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এখানকার নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন হয়ে আছেন মিজানউদ্দিন ও সারোয়ার জাহান।

 

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র ও এ অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং রাজশাহী আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশই মিজানউদ্দিন ও সারোয়ার জাহানকে নতুন করে আর ভিসি-প্রভোসি হিসেবে দেখতে চাইছেন না। ফলে তাদের পরিবর্তে নতুন করে রাবির প্রধান এ দুটি পদে অন্যদের নিয়োগ দিক সরকার-তাই চাচ্ছেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে করে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার মিজান-সারোয়ার ভিসি-প্রোভিসি হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে তাদের কপালে এবার শিকে ঝুলতে পারে-এমনটিও মনে করছেন অনেকেই।

 

  • এ নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়েও নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতারা। সঙ্গে রাবির শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশও চাচ্ছেন না নতুন করে মিজান-সারোয়ারকে ভিসি-প্রোভিসি হিসেবে নিয়োগ দিক। যারা বিগত সময়ে এই ভিসি-প্রোভিসির দ্বারা কোনো রকমের সুযোগ-সুবিধা পাননি, তারা এখন নতুনদের আগমনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। পাশাপাশি হাত মিলিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেও।   

অন্যদিকে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার রাষ্ট্রপতি মিজানউদ্দিন-সারোয়ার জাহানকে নিয়োগ দিক-এটাও চাচ্ছেন রাবি প্রশাসনের একটি বড় অংশ। তাদের দাবি, এই দুজনের আমলে বিশবিদ্যালয় প্রশসানে কাজের গড়ি ফিরে এসেছে। সঙ্গে ফিরেছে শৃঙ্খলা। যা সদূর অতীতে অনেকটা খেয় হারিয়ে ফেলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

  •   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আগের কয়েকজন ভিসি-প্রোভিসিদের স্বজনপ্রীতিতেও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এখানকার শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অধিকাংশ সময়ই অস্থিরতা লেগেই থাকতো। কিন্তু মিজান-সারোয়ারের আমলে তা ছিল না বললেই চলে।

তবে শেষ দিকে এসে জমি কেনা থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার ফলে অনেকটায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন মিজান-সারোয়ার। এরই মধ্যে উচ্চ আদালত ঢাকায় জমি ও ফ্লাট কেনার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলে আরো ব্যাকফুটে চলে গেছেন মিজান-সারোয়ার।

 

এই অবস্থা নতুনদেরই ভিসি-প্রোভিসি হিসেবে রাষ্টপ্রতি নিয়োগ দিবেন-এমনটিও মনে করছেন রাবির শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে নতুনরা আসলেও কারা হচ্ছেন ভিসি-প্রোভিসি-তা নিয়ে চলছে রাবি ও রাজশাহী শহরজুড়ে নানা গুঞ্জন।

 

আলোচনায় আছেন যারা:  রাবির একাধিক সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে  নিশ্চিত করেছে, সিনেট নির্বাচন না হওয়ায় ‘সাম্প্রতিক ধারা’ অনুযায়ী এবারো আচার্য মনোনীত উপাচার্য নিয়োগ হতে যাচ্ছে। তবে এবার একাধিক উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন আছে।

 

  • বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই শীর্ষ দুই পদে সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহানের পাশাপাশি ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রকীব আহমদ এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার নাম আলোচনার শীর্ষে আছে।

 

একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক আহমদ, অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ড. সেলিনা পারভীন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন শিবলী সাদিক ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিনের নাম আলোচনায় আছে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত নতুন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আজ সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে।

 

এর আগে ২০১৩ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মেয়াদান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২২দিন অভিভাবকশূন্য ছিল।

স/আর