শীতের হানা নগরীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়। শিশিরসিক্ত দূর্বা ঘাস, পথঘাট। এইসবই জানান দেয় নগরীতে শীত এসেছে। শীতের আমেজ না, সত্যিকারের শীত। তবে জাঁকিয়ে বসেনি এখনো। লেপ, কম্বল বের করতে শুরু করেছে বাড়ি বাড়ি। শীতের পোশাক সন্ধ্যার পর থেকে পরতে দেখা যাচ্ছে নগরবাসীকে।

এইবার একটু শীত দেরিতেই এলো। সাধারণত দেখা যায়, অক্টোবরের প্রথমদিক থেকেই শীত দেখা দেয় রাজশাহীতে। কিন্তু গতবছর অক্টোবরের শেষে শীত এলেও এবার শীত এলো নভেম্বরের শেষে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ঋতুর ব্যাপক তারতম্য ঘটছে। আগে ছয় ঋতু দেখা গেলেও এখন দৃশ্যত ঋতু দেখা যায়। সেইসব ঋতুর সময়কালেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এসবই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

মাঠে পাকা ধানের সোঁদাগন্ধ আর সাতসকালে উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে হামাগুড়ি দিয়ে শীত আসছে। বাংলার অপরূপা এই প্রকৃতিতে শুরু হতে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের চাল, পায়েস আর পিঠাপুলিতে মেতে উঠতে যাচ্ছে কৃষকের উঠোন। কালের চাকায় ভর করে আবারও সমাগত কুয়াশাচ্ছন্ন শীত।

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে এবার ভিন্ন আবহে কেটেছে কার্তিক। মধ্য নভেম্বরেও শীতের দেখা মেলেনি। কিন্তু অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পার না হতেই আঁচর কেটেছে শীত। এখনো সোয়েটার, চাদর, মাফলার বা লেপ-কম্বল নামাতে পারলেও রাতে ঘরের সিলিং ফ্যানটি বন্ধ হয়েছে। কেউ আবার ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে কমিয়েও রাখছেন।

খরাপ্রবণ রাজশাহীতে গরম যেমন ভয়াবহ শীতও পড়ে তেমন। তাই শহরতলীতে যখন এমন শীতের আমেজ তখন গ্রামগঞ্জে হেমন্তেই যেন এসে গেছে শীত।

সকাল হলেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সেখানে পদধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে শীতের। পাখিদের ডানা ঝাঁপটানো শব্দ আর কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙাছে কৃষকদের। ভোরের হালকা কুয়াশা ভেদ করে মাঠে নামছেন তারা। নতুন আলু, শিম, টমেটো ও মুলা উঠতে শুরু করেছে। বড় আকারের ফুল ও বাঁধাকপিতে ভরে উঠছে কাঁচা বাজার।

কোমরে রশি বেঁধে গাছিরা উঠে পড়ছেন খেজুর গাছে। মিষ্টি-মধুর খেজুরের রস নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করছেন গুড়। ঘরে-ঘরে শুরু হয়ে গেছে নবান্নের প্রস্তুতি। আর গত সপ্তাহ থেকে দিনের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। তাহলে এবছর কাঁপন ধরানো শীত নামবে কবে?

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মধ্য ডিসেম্বরের আগে নয়। অর্থাৎ এ বছর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ মাস এলেই নামবে হাড় কাঁপানো শীত। বিভিন্ন সময় ঘনীভূত হওয়া নিম্নচাপ এবং অসময়ের ঝড়-বৃষ্টির কারণে শীতের পথে বাদ সেধেছে জলীয়বাষ্প। সাধারণত নভেম্বরের শুরুতেই রাজশাহীসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় আগে শীতের অনুভব হয়। তবে, এবছর মৌসুমি বায়ু দেরি করে আসায় গেছেও দেরিতে। তাই এবছর শীতও আসছে দেরি করেই। রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসবে শীত। তবে, এজন্য অপেক্ষা করতে হবে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্তই।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়া কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন  জানান, এক সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ার ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সময় থেকে রাজশাহীর গড় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে।

তিনি জানান, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে  এসেছে। আর সর্বোচ্চ তামপামাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ নভম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ নভেম্বর ছিল ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ নভেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০ নভেম্বর ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ নভেম্বর ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২২ নভেম্বর ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৩ নভেম্বর ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২৪ নভেম্বর (রোববার) ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।